1. info@www.southbdnews24.com : 𝐒𝐨𝐮𝐭𝐡 𝐁𝐃 𝐍𝐞𝐰𝐬 𝟐𝟒 :
বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ০১:৩৭ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
গৌরনদীতে যুবদলের মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত পটুয়াখালীতে ৩০৮টি মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা শুরু পটুয়াখালীতে ৬ দফা দাবিনামা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবীতে স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচী পালিত ৭১ টিভির ১৪ বছরে পদার্পণ; পটুয়াখালীতে কেক কেটে ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে উদযাপিত পটুয়াখালীতে কোস্টগার্ড ও মৎস্য বিভাগ কর্তৃক আড়াই কোটি টাকার জাটকা জব্দ  পটুয়াখালীতে ছাত্রদলের উদ্যোগে বৃক্ষ রোপন কর্মসূচী শুরু বাউফলে ৮ ফুট জায়গা কেড়ে নিলো এক নারীর জীবন গৌরনদী রহমানিয়া মাদরাসার ছাত্রদের নাজরানা ও ছবক প্রদান অনুষ্ঠিত পটুয়াখালীতে আওয়ামী লীগ নেতা তসলিম সিকদার গ্রেফতার  হুমায়ুন কবিরকে বিএনপির দুঃসময়ের কাণ্ডারি উল্লেখ করে পদ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি বিএনপির

রবীন্দ্রনাথ-একটি অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্ক

আনোয়ার হোসেন বাদলঃ
  • প্রকাশিত: সোমবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৪
  • ১৬৭ বার পড়া হয়েছে

রবীন্দ্রনাথের জন্ম জয়ন্তিতে “আমাদের রবীন্দ্রনাথ আমাদের নজরুল” শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলাম। লেখাটিতে সাহিত্যিক বন্ধুরা মন্তব্য-প্রতিমন্তব্যে বহুলোকে অংশগ্রহন করেছিলেন। তার মধ্যে দু’একজন তাদের মন্তব্যে রবীন্দ্রনাথকে আক্রমন করেও বলেছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে নানান লোকের মুখে রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগের কথা শুনতে হচ্ছে।

রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে ঐসকল ব্যক্তিবর্গের সবচেয়ে বড় অভিযোগ হচ্ছে তিনি নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্নে বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশ আর মুসলমান বিরোধীও ছিলেন এমন অভিযোগও তাদের ভাষায় সুস্পষ্ট। এটা বলে তারা বোঝাতে চেয়েছেন যে, লোকটা যেহেতু হিন্দু, তদুপরি মুসলমান আর বাংলাদেশ বিরোধী সেহেতু তার গান বা সাহিত্য আমরা শুনবোও না আর পড়বোও না।

রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে এসকল অভিযোগ কতোটা বাস্তবসম্মত এবং যুক্তিযুক্ত তা হয়তো গবেষণার বিষয়। কেননা রবীন্দ্র যুগের কোন মানুষ এখন আর বেঁচে নেই। এর সবটাই এখন ইতিহাস। তবে তাদের ইতিহাস বহির্ভুত এসব যুক্তিগুলো শুনে বা পড়ে আমি বড়ই আমোদ অনুভব করছি। বুঝতে পারছিনা যে, রবীন্দ্র চর্চা বয়কট করলে লাভ-লোকসানটা কার ঠিক কতোটুকু।

প্রকৃত অর্থে আমি এসকল বিতর্ককে একেবারেই অনাকাঙ্খিত এবং বালখিল্যসুলভ মনে করি। আরে ভাই আপনাদেরকে রবীন্দ্রনাথ শুনতে বা পড়তে কে বাধ্য করেছে? আপনারা বরং ঘর থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করে দিন রবীন্দ্র সঙ্গীতের সমুদয় ফোল্ডারসমূহ বা তার গল্পগুচ্ছসহ সকল সাহিত্যের পুস্তকাদি। দেখিনা কে আপনাদেরকে নিষেধ করে!

আমি কিন্তু ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথের সাথে সাহিত্যিক বা কবি রবীন্দ্রনাথকে এক করে দেখিনা, দেখতে চাইও না। আর দার্শনিক রবীন্দ্রনাথকেতো নয়ই। আমার এ দৃষ্টিভঙ্গির সাথে কারও একমত হবারও দরকারও নেই এটা একান্তই আমার নিজস্ব মতামত। কেননা আমি সৃষ্টির দ্বারা ভাবিত হই, স্রষ্টার দ্বারা নই। তবু রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে যে সকল আলোচনা চলছে একজন সাহিত্যিক হিসেবে তার প্রেক্ষিতে দু’একটি কথা প্রাসঙ্গিক মনে করছি।

প্রথমেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলা যাক। গোড়াতে কিন্তু পূর্ববঙ্গের মুসলমানরাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধিতা করেছিলেন। এর কারণ বিশ্লেষনে দেখা যায় যে, সেই উনিশ শতকের প্রথম দশকে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয় তখনও পূর্ববঙ্গের মুসলমানরা ধর্মীয় শিক্ষার বাইরে তাদের শিক্ষার ব্যাপ্তি খুব একটা স্বতঃস্ফূর্ত বা বিস্তৃত হয়ে ওঠেনি। একটি বিষয় খুব সহজেই অনুমেয় যে, আমাদের এখানের স্কুলগুলো প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে আঠারো শতকের শেষ ভাগে। অর্থাৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্কালে পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির উপযুক্ত কোন ছাত্রই ছিলোনা।

ঐ সময়ে আরও যে বিষয়টি খুব কঠোরভাবে দেখা হতো তা হলো শিক্ষা ব্যবস্থা। পূর্ববঙ্গের তৎকালীন গোড়া মুসলিমরা মনে করতেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বা বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করলে ধর্মের পবিত্রতা নষ্ট হতে পারে। তারা মনে করতেন ইহুদি খ্রিষ্টানদের ঐ শিক্ষা ব্যবস্থা হিন্দুরা গ্রহন করলেও মুসলমানদের তা থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।

এতদ্বসত্বেও বঙ্গীয় অভিজাত শ্রেণির মধ্যে নবাব পরিবার অবিভক্ত বাংলায় ঢাকার গুরুত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন এবং তার জন্যে জমি দিতে রাজী হন। একটু দৃষ্টি দিলেই বিষয়টি পরিস্কার হবে যে আমাদের ধর্মীয় গোড়ামীর কারনে আজও বাংলাদেশের একটিগোষ্ঠী বিশ্ববিদ্যালয়কে নাস্তিকের আখড়া, দোজখের কারখানা ইত্যাদি বলে গালিগালাজ করতেও ছাড়েন না।

তথ্যানুসন্ধানে একথা পরিস্কার হয়ে ওঠে যে, ঐ সময়ে পূর্ববঙ্গে প্রতি দশ হাজার মুসলমানের মধ্যে মাত্র একজন হাই স্কুল পর্যন্ত যেতে পারতো। ঠিক তেমনি সময়ে ঢাকায় কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানে কেবল হিন্দুরাই পড়ার সুযোগ পাবে। কেননা গোটা ভারতবর্ষে তখন খ্রিস্টানদের পাশাপাশি তারাই লেখাপড়ায় এগিয়ে ছিলো। উপরন্তু পূর্ববঙ্গের শিক্ষাখাতে বরাদ্দের বড় টাকাটা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনে চলে গেলে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষত মাদ্রাসাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শিক্ষাখাতের টাকা বরং মাদ্রাসা নির্মাণে ব্যয় হলে মুসলমানদের শিক্ষার হার বাড়বে। এটা ছিলো মুসলমানদের বদ্ধমূল ধারণা।

১৯১২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ছিলেন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। তার নেতৃত্বে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা হয়েছিলো এবং তা ঐ একই কারনে। তাদের যুক্তি ছিলো যে, ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানে মুসলমান ছাত্র টেলিষ্কোপ দিয়ে খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। উপরন্তু তারাতো জানতেন না যে, দেশভাগ হয়ে পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের একটি অংশ হয়ে যাবে। তারা বিরোধিতা করেছিলেন মূলতঃ কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বরাদ্দ কমে যাওয়ার ভয়ে।

অন্যদিকে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে পূর্ব বঙ্গের হিন্দু ছাত্রদের আর কষ্ট করে কোলকাতায় গিয়ে পড়তে হবে না। এটা ভেবেই ঢাকার বালিয়াটির হিন্দু জমিদার এই বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণে প্রচুর অর্থ দান করেছিলেন। সঙ্গত কারণে জগন্নাথ হলের নামকরণ হয় তাঁর পিতা জগন্নাথ রায়চৌধুরী -এর নামে।

ঠিক একইভাবে ঢাকার নবাব পরিবারও জানতেন যে, মুসলিমরা না হলেও হিন্দু ছাত্রদের দিয়ে হলেও বিশ্ববিদ্যালয় চলবে। আর ঢাকাকে কোলকাতার মতো গুরুত্বপূর্ণ আর্থ-রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবশালী শহর হিসেবে তৈরি করতে হলে একটা বিশ্ববিদ্যালয় থাকা দরকার।

এবার রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন কিনা দেখা যাক। “মূর্খদের দেশে আবার কীসের বিশ্ববিদ্যালয় ?” এ কথাটি তিনি কী আদৌ বলেছিলেন? প্রকৃত সত্য হলো এই যে, না এমন কোনো তথ্য প্রমাণ আজ অব্দি কোন সমালোচক বা গবেষক খুঁজে বের করতে পারেননি।

কতিপয় অসার, মূঢ় প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের ইদানীংকালের লেখায় দাবী করা হচ্ছে যে, ১৯১২ সালে কলকাতা গড়ের মাঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে যে সভা হয়েছিলো সেখানে রবীন্দ্রনাথ নাকি সভাপতিত্ব করেছিলেন। অভিযোগটি সর্বৈভ মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট।

রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে যতোটুকু জেনেছি, তার আলোকে বলছি। নব্বই দশকের গোড়ার দিকে রবীন্দ্রনাথের হাতের লেখা চিঠিপত্র প্রকাশ করেছিলো দেশ পত্রিকার শারদীয় সংখ্যায়। আমার পড়ার সৌভাগ্য হয়েছিলো। তার ছেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা স্মৃতিকথাও পড়েছি। রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় এবং পরবর্তীকালে অন্তত শ’ খানেক প্রতিষ্ঠিত মানুষ তার সাহিত্য সমালোচনা করেছেন কিন্তু কারও সমালোচনায় বা গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া যায়নি।

বরং যে সত্যটা পাওয়া যায় তা হলো এই যে, রবীন্দ্রনাথ সেসময় কুষ্টিয়ার শিলাইদহে তার নিজ কুঠিতেই অবস্থান করছিলেন। আমাদের মনে রাখা দরকার যে, যেই ১৯১২ সালের কথা এখানে বলা হচ্ছে তার পরের বছরই রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। সমগ্র ভারতবর্ষে রবীন্দ্রনাথ তখন হাতে গোনা বিখ্যাত ভারতীয়দের মধ্যে একজন, যার প্রতিটা দিনই ইতিহাস হিসেবে নথিবদ্ধ আছে। গবেষক এবং সমালোচকদের ছুরির নিচে গিয়ে সেই ইতিহাসকে প্রতিষ্ঠা পেতে হয়েছে।

গড়ের মাঠে অনুষ্ঠিত ১৯১২ সালের ২৮শে মার্চ যে প্রতিবাদ সভার কথা বলা হয় রবীন্দ্রনাথ ঐদিন যে কোলকাতায় ছিলেন না তার সপক্ষে তথ্যসূত্র হচ্ছে ঐ সময়কার রবীন্দ্রনাথের লেখা চিঠি এবং কবিতা। যার প্রত্যেকটি লেখায় তার নিজ হাতে সন, তারিখ লেখা ছিলো।

এর পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের ছেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখিত স্মৃতিকথা (অন দ্য এজেস অফ লাইফ) থেকেও সুস্পষ্টরুপে যা জানতে পারি তা হলো, তিনি তার বাবা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ২৮শে মার্চের আগেই কোলকাতা ত্যাগ করে শিলাইদহ চলো গিয়েছিলেন। ইতিহাস সাক্ষী আগের দিন অধিক রাত পর্যন্ত কোলকাতায় রবীন্দ্রনাথ নিজের রচিত নাটক “বাল্মীকি প্রতিভা” মঞ্চস্থ দেখে শারিরীকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরদিন ১৯শে মার্চ তার বিলেতে যাবার কথা। ‘ দ্য সিটি অব প্যারিস’ নামক জাহাজে কেবিন বুক করা ছিলো কিন্তু অসুস্থতার জন্যে তিনি যাত্রা বাতিল করেন। পরে ডাক্তারদের চিকিৎসায় ২৪শে মার্চ পর্যন্ত কোলকাতা থেকে ছেলের সাথে শিলাইদহ চলে যান। ১৯১২ সালের ২৮শে মার্চ গড়ের মাঠে যখন প্রতিবাদ সভা ঠিক তখন রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহ নৌকোয় বসে কবিতা লেখায় ব্যস্ত।

উপসংহারে শুধু এটুকু বলবো যে, ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথ আমাদের কাছে মূখ্য নন বরং তার সৃষ্টি আমাদের কাছে বিবেচ্য বিষয়। কোন লেখক কোন জাতের, কোন ধর্মের তা বিচার করে তার লেখার বা সৃষ্টির পোস্টমর্টেম করা চলেনা। তাহলে আমাদেরকে বাদ দিতে হবে জগৎ বিখ্যাত কবি পার্শি বিসে শেলী, গ্যাটে, শেক্সপিয়ারের যাবতীয় সৃষ্টি। লিও তলস্তয়, ফিদওর দস্তয়ভস্কিও বিজাতীয় বলে অপাঙতেয় হবেন। মূল কথা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ পৃথিবীর মানুষের জন্যে যে সৃষ্টি সম্ভার রেখে গিয়েছেন তাকে বিচার করতে হবে কেবলমাত্র তারই আলোকে, অন্যকিছু দিয়ে নয়। সুতরাং স্রষ্টায় ভাবিত না হয়ে সৃষ্টিতে ভাবিত হলে মিটে যাবে অনাকাঙ্খিত সব বিতর্ক।।

লেখকঃ
আনোয়ার হোসেন বাদল
কবি, কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট