০১:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাউফলে ৫ লাখ টাকা নিয়ে “পল্লী উন্নয়ন সংস্থা” নামের এনজিও লাপাত্তা

মুঃ মুজিবুর রহমান, বাউফল, পটুয়াখালীঃ পটুয়াখালীর বাউফলে ঋণ দেওয়ার নামে দুই শতাধিক গ্রহকের কাছ থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন পল্লী উন্নয়ন সংস্থা নামের একটি এনজিও। চলতি মাসের ১৯ জানুয়ারি পৌর শহরে একটি ভাড়া বাসায় কার্যক্রম শুরু করার ৭দিনের মাথায় লাপাত্তা হয়ে যায় কথিত ওই এনজিও সংস্থার কর্মীরা। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে গ্রাহকরা ঋণের টাকা নিতে ওই অফিসের সামনে এসে জড়ো হচ্ছেন। আজ সোমবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে সরেজমিন পৌর শহরের টি এন্ড টি শহরে আবুল হোসেন হাজীর ভবনে গিয়ে দেখা যায় ভবনের দ্বিতলায় পল্লী উন্নয়ন সংস্থা (পিএসইউ) নামে সাইনবোর্ড বাধানো রয়েছে। তালাবদ্ধ অফিস কক্ষের সামনে একাধিক ভুক্তভোগী দাঁড়িয়ে আছেন। কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, সম্প্রতি পৌর শহরের টি এ্যান্ড টি সড়কে আবুল হোসেন হাজীর ভবনে অফিস ভাড়া নেয় পল্লী উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি এনজিও। গত ১৯ জানুয়ারি থেকে ওই ভবনে এনজিও’র অফিস চালু করা হয়। মাঠ পর্যায় গ্রাহক সংগ্রহ করার জন্য স্থানীয় এক নারী মাঠ কর্মীও নিয়োগ দেন তারা। পরে সহজ কিস্তি ও স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেন কয়েক লাখ টাকা। গত বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) ঋণ বিরতণ করার সময় দেন এনজিও সংশ্লিষ্টরা। তবে ওই দিন ঋণ নিতে এসে অফিস তালাবদ্ধ দেখতে পান গ্রাহকরা। এরপর থেকে অফিস তালাবদ্ধ রয়েছে। লাপাত্তা হয়ে গেছেন এক নারীসহ ওই দুই ব্যক্তি। মো. আকাশ হাওলাদার নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, আমি চায়ের দোকান করি। দোকানের সামনেও এনজিও অফিস। তারা আমার দোকানে এসে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। আমি ব্যবসার জন্য ১লাখ টাকার ঋণ নিতে চাই। ঋণ পেতে তারা আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা জমানত হিসেবে নেন। বৃহস্পতিবার ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। বৃহস্পতিবার থেকেই দেখি অফিসে তালা। রুজিনা নামে আরেক ভুক্তভোগী জানান, স্বামী জন্য রিকশা কিনতে ৪০ হাজার টাকা লোন নিতে ৪ হাজার টাকা জমা দিয়েছি। রবিবার লোন দেওয়ার কথা । এতে দেখি অফিস বন্ধ। তাদেরও ফোনও বন্ধ। আমারমত প্রায় দুই শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে ঋণ দেওয়ার কথা বলে প্রায় ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ওই এনজিওর কর্মীরা। এনজিও অফিসের ভবনের মালিক মো. আবুল হোসেন হাজীর সাথেও প্রতারনা করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, গত ১৯ জানুয়ারি আমার বাসায় এনজিও অফিস ভাড়া নিতে বাকেরগঞ্জ উপজেলার মো. শাহিন নামে এক ব্যক্তি যোগাযোগ করেন। ৪ হাজার টাকায় ভাড়া চুড়ান্ত করা হয়। ওই দিনই তারা বাসায় উঠেন। পহেলা ফেব্রুয়ারি প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে চুক্তিপত্র করার কথা ছিল। ফেব্রুয়ারি মাস আসার আগেই নিখোঁজ হয়ে যান ওই শাহিন। মাঠ থেকে গ্রাহক সংগ্রহ করার জন্য মাসিক বেতনে পৌর শহরের দাশপাড়া গ্রামের বাবুল হাওলাদারের মেয়ে মো. রুবিনা বেগমকে মাঠ কর্মী হিসেবে নিয়োগ দেয় কথিত পল্লী উন্নয়ন সংস্থা। এছাড়াও কয়েকজন দালালও গ্রাহক সংগ্রহে মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এনজিও প্রধান শাহিন ও তার সহযোগী হিসেবে পটুয়াখালী শহরের বাসিন্দা পরিচয় দেয়া পারভীন নামেএক নারী গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নেন। দাশপাড়া ইউনিয়নের খেজুরবাড়িয়া, পৌর শহরের ৯ নং ওয়ার্ড, দাশপাড়ার কাঠাল বাড়িয়া, কালাইয়া ও বড় ডালিমাসহ ৬ স্থানে অস্থায়ী কেন্দ্র বানিয়ে প্রায় ২ শতাধিক গ্রাহক সংগ্রহ করে তারা। সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা। সর্বচ্চো ২ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার প্রস্তব দেন। ঋণ নিতে গ্রাহকদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকায়। দুই শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন প্রায় ৫ লাখ টাকা।

এবিষয়ে জানতে চাইলে মাঠ কর্মী রুবিনা বলেন, আমাকে ১২ হাজার টাকা মাসিক বেতন নিয়োগ দেন। আমি আমার এলাকার কিছু মানুষের কাছে ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব দেই। সদস্য ফরমের জন্য ১০০ টাকা করে নিয়েছি। আর ঋণ নেওয়ার জন্য টাকা নিয়েছেন এনজিও প্রধান শাহিন ও তার সহযোগী পারভীন। শাহিন ও পারভীনের বক্তব্য জানতে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন সংযোগ বন্ধ থাকায় কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বশির গাজীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Tag:

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সেইভ করুন:

আমাদের সম্পর্কে জানুন:

South BD News 24

South BD News 24 is committed to publish the daily news of South Bengal based on authenticity, honesty and courage...
জনপ্রিয়

জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ উপলক্ষে পটুয়াখালীর টাউন বহালগাছিয়া সঃ প্রাঃ স্কুলে চিত্রাংকন ও স্কুল ফিডিং অনুষ্ঠিত 

error: Content is protected !!

বাউফলে ৫ লাখ টাকা নিয়ে “পল্লী উন্নয়ন সংস্থা” নামের এনজিও লাপাত্তা

আপডেট সময়: ০৩:৫৭:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৪

মুঃ মুজিবুর রহমান, বাউফল, পটুয়াখালীঃ পটুয়াখালীর বাউফলে ঋণ দেওয়ার নামে দুই শতাধিক গ্রহকের কাছ থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন পল্লী উন্নয়ন সংস্থা নামের একটি এনজিও। চলতি মাসের ১৯ জানুয়ারি পৌর শহরে একটি ভাড়া বাসায় কার্যক্রম শুরু করার ৭দিনের মাথায় লাপাত্তা হয়ে যায় কথিত ওই এনজিও সংস্থার কর্মীরা। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে গ্রাহকরা ঋণের টাকা নিতে ওই অফিসের সামনে এসে জড়ো হচ্ছেন। আজ সোমবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে সরেজমিন পৌর শহরের টি এন্ড টি শহরে আবুল হোসেন হাজীর ভবনে গিয়ে দেখা যায় ভবনের দ্বিতলায় পল্লী উন্নয়ন সংস্থা (পিএসইউ) নামে সাইনবোর্ড বাধানো রয়েছে। তালাবদ্ধ অফিস কক্ষের সামনে একাধিক ভুক্তভোগী দাঁড়িয়ে আছেন। কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, সম্প্রতি পৌর শহরের টি এ্যান্ড টি সড়কে আবুল হোসেন হাজীর ভবনে অফিস ভাড়া নেয় পল্লী উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি এনজিও। গত ১৯ জানুয়ারি থেকে ওই ভবনে এনজিও’র অফিস চালু করা হয়। মাঠ পর্যায় গ্রাহক সংগ্রহ করার জন্য স্থানীয় এক নারী মাঠ কর্মীও নিয়োগ দেন তারা। পরে সহজ কিস্তি ও স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেন কয়েক লাখ টাকা। গত বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) ঋণ বিরতণ করার সময় দেন এনজিও সংশ্লিষ্টরা। তবে ওই দিন ঋণ নিতে এসে অফিস তালাবদ্ধ দেখতে পান গ্রাহকরা। এরপর থেকে অফিস তালাবদ্ধ রয়েছে। লাপাত্তা হয়ে গেছেন এক নারীসহ ওই দুই ব্যক্তি। মো. আকাশ হাওলাদার নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, আমি চায়ের দোকান করি। দোকানের সামনেও এনজিও অফিস। তারা আমার দোকানে এসে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। আমি ব্যবসার জন্য ১লাখ টাকার ঋণ নিতে চাই। ঋণ পেতে তারা আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা জমানত হিসেবে নেন। বৃহস্পতিবার ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। বৃহস্পতিবার থেকেই দেখি অফিসে তালা। রুজিনা নামে আরেক ভুক্তভোগী জানান, স্বামী জন্য রিকশা কিনতে ৪০ হাজার টাকা লোন নিতে ৪ হাজার টাকা জমা দিয়েছি। রবিবার লোন দেওয়ার কথা । এতে দেখি অফিস বন্ধ। তাদেরও ফোনও বন্ধ। আমারমত প্রায় দুই শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে ঋণ দেওয়ার কথা বলে প্রায় ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ওই এনজিওর কর্মীরা। এনজিও অফিসের ভবনের মালিক মো. আবুল হোসেন হাজীর সাথেও প্রতারনা করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, গত ১৯ জানুয়ারি আমার বাসায় এনজিও অফিস ভাড়া নিতে বাকেরগঞ্জ উপজেলার মো. শাহিন নামে এক ব্যক্তি যোগাযোগ করেন। ৪ হাজার টাকায় ভাড়া চুড়ান্ত করা হয়। ওই দিনই তারা বাসায় উঠেন। পহেলা ফেব্রুয়ারি প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে চুক্তিপত্র করার কথা ছিল। ফেব্রুয়ারি মাস আসার আগেই নিখোঁজ হয়ে যান ওই শাহিন। মাঠ থেকে গ্রাহক সংগ্রহ করার জন্য মাসিক বেতনে পৌর শহরের দাশপাড়া গ্রামের বাবুল হাওলাদারের মেয়ে মো. রুবিনা বেগমকে মাঠ কর্মী হিসেবে নিয়োগ দেয় কথিত পল্লী উন্নয়ন সংস্থা। এছাড়াও কয়েকজন দালালও গ্রাহক সংগ্রহে মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এনজিও প্রধান শাহিন ও তার সহযোগী হিসেবে পটুয়াখালী শহরের বাসিন্দা পরিচয় দেয়া পারভীন নামেএক নারী গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নেন। দাশপাড়া ইউনিয়নের খেজুরবাড়িয়া, পৌর শহরের ৯ নং ওয়ার্ড, দাশপাড়ার কাঠাল বাড়িয়া, কালাইয়া ও বড় ডালিমাসহ ৬ স্থানে অস্থায়ী কেন্দ্র বানিয়ে প্রায় ২ শতাধিক গ্রাহক সংগ্রহ করে তারা। সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা। সর্বচ্চো ২ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার প্রস্তব দেন। ঋণ নিতে গ্রাহকদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকায়। দুই শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন প্রায় ৫ লাখ টাকা।

এবিষয়ে জানতে চাইলে মাঠ কর্মী রুবিনা বলেন, আমাকে ১২ হাজার টাকা মাসিক বেতন নিয়োগ দেন। আমি আমার এলাকার কিছু মানুষের কাছে ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব দেই। সদস্য ফরমের জন্য ১০০ টাকা করে নিয়েছি। আর ঋণ নেওয়ার জন্য টাকা নিয়েছেন এনজিও প্রধান শাহিন ও তার সহযোগী পারভীন। শাহিন ও পারভীনের বক্তব্য জানতে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন সংযোগ বন্ধ থাকায় কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বশির গাজীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।