এম জাফরান হারুন, পটুয়াখালীঃ ‘মেয়ের ইন্টার পরীক্ষা শেষ হলেই তারা দূরে কোথাও চলে যাবেন, যেখানে কেউ চিনবে না, আঙুল তুলবে না। তবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই থেমে গেল লামিয়ার জীবন।’ বলে বারবার আহাজারি করছেন লামিয়ার মা।
এদিকে লামিয়ার আত্মহত্যার কিছু সময় আগেও লামিয়ার সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবরিনা আফরোজ শ্রাবন্তী। কাটানো সেই সময়ের মর্মস্পর্শী বর্ণনা তুলে ধরে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন শ্রাবন্তী।
সাবরিনা আফরোজ জানান, ‘আত্মহত্যার কয়েক ঘণ্টা আগেও তিনি লামিয়ার বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে সময় কাটিয়েছিলেন। গল্প করেছেন, খাওয়া-দাওয়া করেছেন। বিদায়ের সময় লামিয়ার কণ্ঠে ফুটে উঠেছিল অসহায়তা ও ক্ষোভ, ‘আল্লাহ যা করে, সেটা নাকি ভালোর জন্যই করে। আমার কি ভালো করসে বলতে পারেন? আমার সঙ্গে খালিহ খারাপই হইসে!’
সাবরিনা আফরোজের মতে, ‘লামিয়ার মৃত্যু শুধু ধর্ষণের ঘটনার ট্রমা থেকে নয়, বরং সমাজের ফিসফাস, কটূক্তি, সন্দেহ, ও চরিত্র হরণের সংস্কৃতি তার আত্মাকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। বাসার আশপাশের মানুষের কানাঘুসা ও নোংরা ইঙ্গিত তাকে মানসিকভাবে এমন পর্যায়ে ঠেলে দেয়, যেখানে আর বেঁচে থাকার শক্তি ছিল না।’
‘এই ঘটনায় শুধু ধর্ষণকারীরাই নয় বরং যারা ভুক্তভোগীর চরিত্র নিয়ে কটূক্তি করেছে, যারা তার প্রতি অবজ্ঞা ছড়িয়েছে, তারাও কম দায়ী নয় এমন মন্তব্য করেছেন সাবরিনা আফরোজ। লামিয়ার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ফের একবার প্রমাণ হলো, ধর্ষণের পর শুধু অপরাধ নয়, সামাজিক বৈষম্য ও অবজ্ঞাও একটি মেয়েকে ধ্বংস করে দিতে পারে। একজন মেয়ের সম্মতি ছাড়া যদি কিছু ঘটে, সেখানে মেয়েটার অপরাধ কোথায়? সাবরিনা আফরোজের এই প্রশ্ন গোটা সমাজের বিবেককে নাড়া দেওয়ার মতো।’
লামিয়ার মৃত্যু একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডির চেয়েও বড়। এটি পুরো সমাজের এক নির্মম, বিকৃত মানসিকতার প্রতিচ্ছবি। যেখানে একজন নির্যাতিতাও নিরাপদ নয়, যেখানে দোষীদের বিচার অপেক্ষার চেয়েও দ্রুত হয় ভুক্তভোগীকে দোষারোপ। যেখানে ভিকটিম-ব্লেমিং আজও আমাদের নষ্ট সংস্কৃতির অংশ।
পারিবারিক সূত্র জানায়, গত ১৮ই মার্চ-২৫ ইং পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাংগাশিয়া ইউনিয়নের নিজ বাড়ি থেকে নানা বাড়ি যাওয়ার পথে লামিয়া সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। পরে তিনি নিজেই বাদী হয়ে থানায় গিয়ে অভিযুক্ত দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। ইতোমধ্যে দুমকি থানা পুলিশ অভিযুক্ত শাকিব ও সিফাতকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছে।
দুমকি থানার ওসি মোহাম্মদ জাকির হোসেন জানান, “সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লামিয়ার ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। ”
গত বছরের ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে ১০ দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জসিম হাওলাদার।