০২:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নতুন পদ্ধতিতে ‘এমপি পার্কে’ ছাদ বাগান

নতুন পদ্ধতিতে 'এমপি পার্কে' ছাদ বাগান

ইট কাঠের নাগরিক সভ্যতার শহরগুলো থেকে দ্রুতই হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ। কিন্তু মানুষ তার শিকড়কে সহজে ভুলতে পারে না। সবুজে ভরা গ্রাম বাংলায় বেড়ে উঠা নাগরিক সমাজের একটা অংশ সবুজকে ধরে রাখতে চায় আবাসস্থলে। শৌখিন মানুষরা তাদের ঘরবাড়িতে সবুজকে ধরে রাখার জন্য একান্ত নিজস্ব ভাবনা আর প্রচেষ্টায় আপন আপন বাড়ির ছাদে তৈরি করছে ছাদ বাগান।

সময়ের সাথে এ বাগান এখন আর শৌখিনতায় আটকে নেই। নিরাপদ সবজি দিয়ে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদাপূরণ, পারিবারিক বিনোদন এবং অবসর কাটানোর এক মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে এ ছাদ বাগানগুলো। বাংলাদেশের শহুরে কৃষি ব্যবস্থার শৌখিন পদযাত্রা সময়ের বিবর্তনে এক সামাজিক আন্দোলনে রূপ নিতে যাচ্ছে।

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাচকৈড় বাজারের বাসিন্দা সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ আবুল কাশেম সরকার তার নিজ বাস ভবনের ৫তলা বাড়ির ছাদে করেছেন ছাদ বাগান। ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন তিনি। সরেজমীনে গিয়ে দেখা যায়, চাঁচকৈড় বাজারে প্রবেশের পথেই অবস্থিত একটি ৫তলা বাড়ি।

বাড়ির নাম “এমপি পার্ক”। গুটি গুটি পায়ে সিঁড়ি বেয়ে বাড়ির ছাদে প্রবেশ করার মুহূর্তেই চোখে পড়ে ছাদের ওপরে একটি বিশাল ছাতা। ছাতার নিচে বসে পরিবারের সকল সদস্যরা চা-কফি আড্ডায় মেতে উঠেছে। এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতি। ছাদের প্রায় সবটুকু জুড়ে সবুজের সমারোহ। আর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নন্দকুজা নদী।

ছাদ ঘুরে দেখাযায়, আপেল, পেয়ারা, ছবেদা, চেরি, ডালিম, আক্সগুর, বাতাবি লেবুসহ প্রায় ১৬ রকম ফলের গাছ ও সকল প্রকার সবজি। তাছাড়াও রয়েছে সুন্দর্যবর্ধনের জন্য বিভিন্ন জাতের ফুল গাছ। ছাদ বাগান থেকে প্রতিদিন টাটকা সবজি উঠিয়ে রান্না করতে পারেন এবং প্রতিদিন নাস্তার টেবিলে থাকে নিজেদের লাগানো গাছের ফল। গত ৯ বছর আগে তিনি ছাদ বাগান শুরু করেছিলেন।

প্রথমের দিকে অল্প কিছু গাছ দিয়ে শুরু করে এখন তা সম্পূর্ণরুপে চাষ হচ্ছে। ছাদ বাগানের উদ্যোক্তা সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ আবুল কাশেম সরকার জানান, শহরে ছাদ বাগান স্থাপন করা হলে শহরের তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি পর্যন্ত কমে আসে। আমাদের শহরগুলোতে মাটির অস্তিত্ব দিন দিন কমে আসছে। ইট-কাঠের ভবনের বদলে দ্রুতই বৃদ্ধি পাচ্ছে ইস্পতের কাঠামো ও কাঁচে মোড়ানো বহুতল ভবন। বিশেষ করে জানালায় কাঁচ ও বাণিজ্যিক ভবনের টেকসই স্থাপনার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে হালকা কিন্তু শক্তিশালী ধাতব পাত, ফাইবার ও গ্লাস। সূর্য থেকে তাপ ও আলো এ ধাতব ও কাঁচের কাঠামোর একটিতে পড়ে অপরটিতে প্রতিফলিত হয়।

এসব কিছু দেখে বাড়ি করার পরপরই আমি ছাদ বাগান শুরু করি। ইট-বালু মিশ্রণ দিয়ে ৫০ফিটের একটি বক্স করে তার মধ্যে সবজি ও ফলের চারা রোপন করা হয়েছে। এটি একটি সম্পূর্ণ রুপে নতুন পদ্ধতি। এ পদ্ধতির ফলে গাছের শিকড় মাটি পর্যন্ত বিস্তির্ন হয়ে থাকতে পারবে। তারপরও হাফ ড্রাম, মাটির টব, স্টিল প্লাস্টিক ট্রে ও বাড়িতে পরে থাকা তেল, বিস্কুট, মুড়ির খালি জার এবং প্লাস্টিকের খালি বস্তা কাজে লাগিয়ে সেখানে বিভিন্ন জাতের ফল, ফুল ও সবজির চারা রোপন করা হয়েছে। প্রতিদিন আমার পরিবারের চাহিদার চেয়েও বেশি সবজি ও ফল আমার ছাদ বাগান থেকে পাওয়া যায়। তারপরও আমার অবসর সময় এখন ছাদ বাগানেই কাটে। গাছের পরিচর্ষা করতেই একটি প্রশান্তি কাজ করে। প্রতিটি বাড়ির ছাদে এরকম ভাবে ছাদ বাগান গড়ে তোলা দরকার। তাতে অক্সিজেন, সবুজ পরিবেশ, অবসর সময় কাটানো ও আর্থিকভাবে স্বচ্ছলতা ফিরে আসবে। এ দেশের মাটি সোনার মাটি।

প্রতিটি কৃষকের কাছে তিনি আরো অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আপনারা আপনাদের কৃষি জমির জায়গা ফাকা না রেখে ফসল ফলান এবং যাদের ছাদ ভবন আছে তারা ছাদ বাগান করুন।

Tag:

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সেইভ করুন:

আমাদের সম্পর্কে জানুন:

South BD News 24

South BD News 24 is committed to publish the daily news of South Bengal based on authenticity, honesty and courage...
জনপ্রিয়

জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ উপলক্ষে পটুয়াখালীর টাউন বহালগাছিয়া সঃ প্রাঃ স্কুলে চিত্রাংকন ও স্কুল ফিডিং অনুষ্ঠিত 

error: Content is protected !!

নতুন পদ্ধতিতে ‘এমপি পার্কে’ ছাদ বাগান

আপডেট সময়: ০৫:৪৯:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর ২০২০

ইট কাঠের নাগরিক সভ্যতার শহরগুলো থেকে দ্রুতই হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ। কিন্তু মানুষ তার শিকড়কে সহজে ভুলতে পারে না। সবুজে ভরা গ্রাম বাংলায় বেড়ে উঠা নাগরিক সমাজের একটা অংশ সবুজকে ধরে রাখতে চায় আবাসস্থলে। শৌখিন মানুষরা তাদের ঘরবাড়িতে সবুজকে ধরে রাখার জন্য একান্ত নিজস্ব ভাবনা আর প্রচেষ্টায় আপন আপন বাড়ির ছাদে তৈরি করছে ছাদ বাগান।

সময়ের সাথে এ বাগান এখন আর শৌখিনতায় আটকে নেই। নিরাপদ সবজি দিয়ে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদাপূরণ, পারিবারিক বিনোদন এবং অবসর কাটানোর এক মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে এ ছাদ বাগানগুলো। বাংলাদেশের শহুরে কৃষি ব্যবস্থার শৌখিন পদযাত্রা সময়ের বিবর্তনে এক সামাজিক আন্দোলনে রূপ নিতে যাচ্ছে।

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাচকৈড় বাজারের বাসিন্দা সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ আবুল কাশেম সরকার তার নিজ বাস ভবনের ৫তলা বাড়ির ছাদে করেছেন ছাদ বাগান। ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন তিনি। সরেজমীনে গিয়ে দেখা যায়, চাঁচকৈড় বাজারে প্রবেশের পথেই অবস্থিত একটি ৫তলা বাড়ি।

বাড়ির নাম “এমপি পার্ক”। গুটি গুটি পায়ে সিঁড়ি বেয়ে বাড়ির ছাদে প্রবেশ করার মুহূর্তেই চোখে পড়ে ছাদের ওপরে একটি বিশাল ছাতা। ছাতার নিচে বসে পরিবারের সকল সদস্যরা চা-কফি আড্ডায় মেতে উঠেছে। এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতি। ছাদের প্রায় সবটুকু জুড়ে সবুজের সমারোহ। আর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নন্দকুজা নদী।

ছাদ ঘুরে দেখাযায়, আপেল, পেয়ারা, ছবেদা, চেরি, ডালিম, আক্সগুর, বাতাবি লেবুসহ প্রায় ১৬ রকম ফলের গাছ ও সকল প্রকার সবজি। তাছাড়াও রয়েছে সুন্দর্যবর্ধনের জন্য বিভিন্ন জাতের ফুল গাছ। ছাদ বাগান থেকে প্রতিদিন টাটকা সবজি উঠিয়ে রান্না করতে পারেন এবং প্রতিদিন নাস্তার টেবিলে থাকে নিজেদের লাগানো গাছের ফল। গত ৯ বছর আগে তিনি ছাদ বাগান শুরু করেছিলেন।

প্রথমের দিকে অল্প কিছু গাছ দিয়ে শুরু করে এখন তা সম্পূর্ণরুপে চাষ হচ্ছে। ছাদ বাগানের উদ্যোক্তা সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ আবুল কাশেম সরকার জানান, শহরে ছাদ বাগান স্থাপন করা হলে শহরের তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি পর্যন্ত কমে আসে। আমাদের শহরগুলোতে মাটির অস্তিত্ব দিন দিন কমে আসছে। ইট-কাঠের ভবনের বদলে দ্রুতই বৃদ্ধি পাচ্ছে ইস্পতের কাঠামো ও কাঁচে মোড়ানো বহুতল ভবন। বিশেষ করে জানালায় কাঁচ ও বাণিজ্যিক ভবনের টেকসই স্থাপনার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে হালকা কিন্তু শক্তিশালী ধাতব পাত, ফাইবার ও গ্লাস। সূর্য থেকে তাপ ও আলো এ ধাতব ও কাঁচের কাঠামোর একটিতে পড়ে অপরটিতে প্রতিফলিত হয়।

এসব কিছু দেখে বাড়ি করার পরপরই আমি ছাদ বাগান শুরু করি। ইট-বালু মিশ্রণ দিয়ে ৫০ফিটের একটি বক্স করে তার মধ্যে সবজি ও ফলের চারা রোপন করা হয়েছে। এটি একটি সম্পূর্ণ রুপে নতুন পদ্ধতি। এ পদ্ধতির ফলে গাছের শিকড় মাটি পর্যন্ত বিস্তির্ন হয়ে থাকতে পারবে। তারপরও হাফ ড্রাম, মাটির টব, স্টিল প্লাস্টিক ট্রে ও বাড়িতে পরে থাকা তেল, বিস্কুট, মুড়ির খালি জার এবং প্লাস্টিকের খালি বস্তা কাজে লাগিয়ে সেখানে বিভিন্ন জাতের ফল, ফুল ও সবজির চারা রোপন করা হয়েছে। প্রতিদিন আমার পরিবারের চাহিদার চেয়েও বেশি সবজি ও ফল আমার ছাদ বাগান থেকে পাওয়া যায়। তারপরও আমার অবসর সময় এখন ছাদ বাগানেই কাটে। গাছের পরিচর্ষা করতেই একটি প্রশান্তি কাজ করে। প্রতিটি বাড়ির ছাদে এরকম ভাবে ছাদ বাগান গড়ে তোলা দরকার। তাতে অক্সিজেন, সবুজ পরিবেশ, অবসর সময় কাটানো ও আর্থিকভাবে স্বচ্ছলতা ফিরে আসবে। এ দেশের মাটি সোনার মাটি।

প্রতিটি কৃষকের কাছে তিনি আরো অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আপনারা আপনাদের কৃষি জমির জায়গা ফাকা না রেখে ফসল ফলান এবং যাদের ছাদ ভবন আছে তারা ছাদ বাগান করুন।