০২:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

“আমি আমার নিজের ইচ্ছায় কিছুই করিনি। আমাকে বাধ্য করা হয়েছে”- পটুয়াখালীতে চিরকুট লিখে স্কুল ছাত্রীর আ*ত্ম*হ*ত্যা

এম জাফরান হারুন, পটুয়াখালীঃ “আমি আমার নিজের ইচ্ছায় কিছুই করিনি। আমাকে বাধ্য করা হয়েছে। ওই ছেলের জন্য আর ওর পরিবারের জন্য, আমার জীবন থেকে মনে হয় সব সুখ শান্তি চলে”- এমন চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করেছে পটুয়াখালীর বাউফলে এক স্কুল ছাত্রী (১৫)। তবে চিরকুটে পানি লেগেছিল। মনে হচ্ছে লেখা শেষ না করেই আত্মহত্যা করেন ওই ছাত্রী। হয়তো আরও কিছু লিখতে চেয়েছিল এমনটা মনে হচ্ছে।

শুক্রবার (১৪ মার্চ) বিকেলের দিকে উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের শৌলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। একইদিন রাত ১২টার দিকে ওই ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মর্গে পাঠায় পুলিশ।

ওই ছাত্রীর পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পূর্ব কালাইয়া হাসান সিদ্দিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল ওই শিক্ষার্থী। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে বিভিন্ন সময় তাকে উত্ত্যক্ত করতো একই বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী রিয়াদুল ইসলাম তাওসিন (১৭)।

বিষয়টি তাওসিনের পরিবার ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জানায় ওই স্কুলছাত্রীর পরিবার। তবে কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে তাওসিন। ওই ছাত্রীর আরেক সহপাঠীর সঙ্গে তোলা ছবিতে বাজে মন্তব্য লিখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন তাহসিন। বিষয়টি জানার পর চিরকুট লিখে নিজ কক্ষের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন ওই ছাত্রী।

নিহত ছাত্রীর মা কুলসুম বেগম বলেন, “আমার মেয়ে অত্যন্ত ভদ্র ও লাজুক। তাকে বিভিন্ন সময় বখাটে তাওসিন কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। বিষয়টি বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক ও ওই বখাটের চাচাকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। শুক্রবার আমার মেয়ের সঙ্গে তার এক সহপাঠীর তোলা স্বাভাবিক ছবিতে বাজে মন্তব্য লিখে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয় ওই বখাটে। এতে লোকলজ্জার ভয়ে আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।”

নিহত ছাত্রীর বাবা নজরুল ইসলাম খান বলেন, “আত্মহত্যার আগে আমার মেয়ে চিরকুট লিখে গেছে। চিরকুটে আত্মহত্যার জন্য ওই ছেলেকে দায়ী করে গেছে। আমার মেয়েকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে তাওসিন। আমরা ওই বখাটের বিচারে ফাঁসি চাই।”

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসলেও আমাকে জানানো হয় ঘটনার একদিন আগে। জানার পরে আমি তাওসিন ও তার পরিবারের লোকজনকে ডেকে এনে সাবধান করে দিয়েছি।”

এ ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত তাওসিন ও তার পরিবারের কারো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর থেকে তারা আত্মগোপনে চলে গেছেন।

বাউফল থানার ওসি মো. কামাল হোসেন বলেন, “প্রথমে বিষয়টি পুলিশকে জানায়নি নিহত ছাত্রীর পরিবার। পরে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছি। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।”

Tag:

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সেইভ করুন:

আমাদের সম্পর্কে জানুন:

South BD News 24

South BD News 24 is committed to publish the daily news of South Bengal based on authenticity, honesty and courage...

পটুয়াখালীতে ৩,৫৭০ কেজি জাটকা জব্দ; দুঃস্থদের মাঝে বিতরণ

error: Content is protected !!

“আমি আমার নিজের ইচ্ছায় কিছুই করিনি। আমাকে বাধ্য করা হয়েছে”- পটুয়াখালীতে চিরকুট লিখে স্কুল ছাত্রীর আ*ত্ম*হ*ত্যা

আপডেট সময়: ১০:২৫:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

এম জাফরান হারুন, পটুয়াখালীঃ “আমি আমার নিজের ইচ্ছায় কিছুই করিনি। আমাকে বাধ্য করা হয়েছে। ওই ছেলের জন্য আর ওর পরিবারের জন্য, আমার জীবন থেকে মনে হয় সব সুখ শান্তি চলে”- এমন চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করেছে পটুয়াখালীর বাউফলে এক স্কুল ছাত্রী (১৫)। তবে চিরকুটে পানি লেগেছিল। মনে হচ্ছে লেখা শেষ না করেই আত্মহত্যা করেন ওই ছাত্রী। হয়তো আরও কিছু লিখতে চেয়েছিল এমনটা মনে হচ্ছে।

শুক্রবার (১৪ মার্চ) বিকেলের দিকে উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের শৌলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। একইদিন রাত ১২টার দিকে ওই ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মর্গে পাঠায় পুলিশ।

ওই ছাত্রীর পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পূর্ব কালাইয়া হাসান সিদ্দিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল ওই শিক্ষার্থী। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে বিভিন্ন সময় তাকে উত্ত্যক্ত করতো একই বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী রিয়াদুল ইসলাম তাওসিন (১৭)।

বিষয়টি তাওসিনের পরিবার ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জানায় ওই স্কুলছাত্রীর পরিবার। তবে কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে তাওসিন। ওই ছাত্রীর আরেক সহপাঠীর সঙ্গে তোলা ছবিতে বাজে মন্তব্য লিখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন তাহসিন। বিষয়টি জানার পর চিরকুট লিখে নিজ কক্ষের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন ওই ছাত্রী।

নিহত ছাত্রীর মা কুলসুম বেগম বলেন, “আমার মেয়ে অত্যন্ত ভদ্র ও লাজুক। তাকে বিভিন্ন সময় বখাটে তাওসিন কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। বিষয়টি বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক ও ওই বখাটের চাচাকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। শুক্রবার আমার মেয়ের সঙ্গে তার এক সহপাঠীর তোলা স্বাভাবিক ছবিতে বাজে মন্তব্য লিখে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয় ওই বখাটে। এতে লোকলজ্জার ভয়ে আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।”

নিহত ছাত্রীর বাবা নজরুল ইসলাম খান বলেন, “আত্মহত্যার আগে আমার মেয়ে চিরকুট লিখে গেছে। চিরকুটে আত্মহত্যার জন্য ওই ছেলেকে দায়ী করে গেছে। আমার মেয়েকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে তাওসিন। আমরা ওই বখাটের বিচারে ফাঁসি চাই।”

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসলেও আমাকে জানানো হয় ঘটনার একদিন আগে। জানার পরে আমি তাওসিন ও তার পরিবারের লোকজনকে ডেকে এনে সাবধান করে দিয়েছি।”

এ ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত তাওসিন ও তার পরিবারের কারো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর থেকে তারা আত্মগোপনে চলে গেছেন।

বাউফল থানার ওসি মো. কামাল হোসেন বলেন, “প্রথমে বিষয়টি পুলিশকে জানায়নি নিহত ছাত্রীর পরিবার। পরে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছি। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।”