১০:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পবিপ্রবির ছাত্র আশিকের অকাল মৃত্যু: চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে তদন্ত কমিটি, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

জালাল আহমেদ, প্রধান প্রতিবেদকঃ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) কৃষি অনুষদের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী, কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার তালুক সুবল গ্রামের নুর আলম সরদার ও বিলকিস আক্তার বেগমের সন্তান হুসাইন মোহাম্মদ আশিক (১৯)-এর অকাল মৃত্যু ঘিরে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আট সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা এক কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।

১৪ এপ্রিল, বাংলা নববর্ষের সকালে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণের পর সরকারি জনতা কলেজ মাঠের পাশে পুকুরঘাটে বিশ্রাম নিতে গিয়ে আশিক পা পিছলে পানিতে পড়ে যান এবং অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে তাকে উদ্ধার করে পটুয়াখালী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আনা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের অবহেলার কারনেই আশিকের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে নেওয়ার পর জরুরি চিকিৎসা না দিয়ে দীর্ঘ সময় তাকে অপেক্ষায় রাখা হয়। স্বজনদের অভিযোগ, যদি দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া হতো, তাহলে এই মেধাবী শিক্ষার্থীর অকাল মৃত্যু হয়তোবা হতো না, বাঁচানো যেত।

জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন স্বাক্ষরিত এক আদেশে আশিকের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাতে আহ্বায়ক করা হয়েছে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. খালেদুর রহমান মিয়াকে। সদস্যরা হলেন—অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. তারেক হাওলাদার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সাজেদুল ইসলাম সজল, পবিপ্রবির প্রক্টর আবুল বাশার খান, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক ডা. নিজাম উদ্দিন এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে মইন উদ্দিন, নুরে আল ফাহাদ ও মীম সাদাত শাহরিয়ার।

তদন্ত কমিটিকে সময়কালীন হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ, চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষ্য সংগ্রহ করে দ্রুত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আশিকের মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বলেন, এই মৃত্যু শুধুই দুর্ঘটনা নয়—এটি চিকিৎসা ব্যবস্থার চরম শৈথিল্যের ফল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম এক শোকবার্তায় বলেন, “এই মেধাবী শিক্ষার্থীর অকাল মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। মহান আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হিসেবে কবুল করেন।”

মরহুম আশিকের নামাজে জানাজা ১৪ এপ্রিল রাত ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়।

Tag:

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সেইভ করুন:

আমাদের সম্পর্কে জানুন:

South BD News 24

South BD News 24 is committed to publish the daily news of South Bengal based on authenticity, honesty and courage...

পটুয়াখালীতে ৩,৫৭০ কেজি জাটকা জব্দ; দুঃস্থদের মাঝে বিতরণ

error: Content is protected !!

পবিপ্রবির ছাত্র আশিকের অকাল মৃত্যু: চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে তদন্ত কমিটি, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

আপডেট সময়: ০৪:৪২:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

জালাল আহমেদ, প্রধান প্রতিবেদকঃ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) কৃষি অনুষদের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী, কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার তালুক সুবল গ্রামের নুর আলম সরদার ও বিলকিস আক্তার বেগমের সন্তান হুসাইন মোহাম্মদ আশিক (১৯)-এর অকাল মৃত্যু ঘিরে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আট সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা এক কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।

১৪ এপ্রিল, বাংলা নববর্ষের সকালে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণের পর সরকারি জনতা কলেজ মাঠের পাশে পুকুরঘাটে বিশ্রাম নিতে গিয়ে আশিক পা পিছলে পানিতে পড়ে যান এবং অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে তাকে উদ্ধার করে পটুয়াখালী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আনা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের অবহেলার কারনেই আশিকের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে নেওয়ার পর জরুরি চিকিৎসা না দিয়ে দীর্ঘ সময় তাকে অপেক্ষায় রাখা হয়। স্বজনদের অভিযোগ, যদি দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া হতো, তাহলে এই মেধাবী শিক্ষার্থীর অকাল মৃত্যু হয়তোবা হতো না, বাঁচানো যেত।

জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন স্বাক্ষরিত এক আদেশে আশিকের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাতে আহ্বায়ক করা হয়েছে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. খালেদুর রহমান মিয়াকে। সদস্যরা হলেন—অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. তারেক হাওলাদার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সাজেদুল ইসলাম সজল, পবিপ্রবির প্রক্টর আবুল বাশার খান, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক ডা. নিজাম উদ্দিন এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে মইন উদ্দিন, নুরে আল ফাহাদ ও মীম সাদাত শাহরিয়ার।

তদন্ত কমিটিকে সময়কালীন হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ, চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষ্য সংগ্রহ করে দ্রুত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আশিকের মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বলেন, এই মৃত্যু শুধুই দুর্ঘটনা নয়—এটি চিকিৎসা ব্যবস্থার চরম শৈথিল্যের ফল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম এক শোকবার্তায় বলেন, “এই মেধাবী শিক্ষার্থীর অকাল মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। মহান আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হিসেবে কবুল করেন।”

মরহুম আশিকের নামাজে জানাজা ১৪ এপ্রিল রাত ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়।