• মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৫৭ অপরাহ্ন |
  • English Version
শিরোনাম :
চাঞ্চল্যকর হ*ত্যা মামলার প্রধান আসামী পলাতক গোবিন্দ ঘরামী র‍্যাবের হাতে গ্রে*ফতা*র বরগুনায় জাকের পার্টির বর্ণাঢ্য র‍্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত বাউফলে সরকারি যাত্রীছাউনি দখল করে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার অভিযোগ প*রকি*য়া প্রেমে বাঁধা দেয়ায় স্বামীকে বি*ষ খাইয়ে হ*ত্যা; প্রধান অভিযুক্ত আকলিমা ও কথিত প*রকি*য়া প্রেমিক নেসার র‍্যাব এর হাতে গ্রে*ফতা*র সাংবাদিক আব্দুস সালাম আরিফের পিতার জানাজায় মানুষের ঢল পটুয়াখালীতে সাতাঁর প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত  যে ইউনিয়ন পরিষদে ২০ বছরেও বসেনি কোনো চেয়ারম্যান-মেম্বার, তবে অ*পক*র্মের রাজ্যস্থল বাউফলে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান উপলক্ষে জনসচেতনামূলক সভা অনুষ্ঠিত গৌরনদীতে ব্যবসায়ীর কোমরে পি*স্তল সদৃশ ঠেকিয়ে চাঁ*দা দাবি; গ*ণধো*লাই দিয়ে যুবককে পুলিশে সোপর্দ গৌরনদীতে জামাতের নির্বাচনী গণসংযোগ অনুষ্ঠিত

শতকোটির উন্নয়ন প্রকল্প ফেলে পালিয়েছে এমপির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান, জনদুর্ভোগ চরমে

এম জাফরান হারুন, পটুয়াখালীঃ / ২০১ বার পড়া হয়েছে
Update : মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৫৭ অপরাহ্ন

এম জাফরান হারুন, পটুয়াখালী: পটুয়াখালীতে প্রায় শত কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প অসমাপ্ত রেখে পালিয়ে গেছে সাবেক এমপির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ফলে অর্ধ সমাপ্ত এ সকল প্রকল্প নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকাবাসী। প্রায় ৯৩ কোটি ২১ লাখ ৭৬ হাজার ৫২ টাকা প্রাক্কলনে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে কার্যাদেশ পেয়েছিল পিরোজপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইফতি ইটিসিএল প্রাইভেট লিমিটেড। পটুয়াখালী এলজিইডি প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করছে।

সরেজমিনে পরিদর্শনকালে পটুয়াখালী সদর ও মির্জাগঞ্জ উপজেলার একাধিক সাইটে গিয়ে দেখা যায়, কোনো প্রকল্পের ড্রেনের কাজ অর্ধেক করা হয়েছে, কোনো সড়কে খোয়া ফেলা হয়েছে কিন্তু রোলার দিয়ে সমান করা হয়নি। কোনো কোনো সড়ক কার্পেটিং করা হয়নি। আবার কোনো সড়কে মাটি কেটে বেড তৈরী করা হয়েছে কিন্তু খোয়া-বালু কিছুই না দেয়ায় সেখানে বর্ষায় পানি জমে ছোট ছোট পুকুরের মতো গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আয়রণ ব্রিজের কোনোটিতে পিলার বসানো হয়েছে, অ্যাঙ্গেল দেওয়া হয়নি, আবার কোনোটির পিলার-অ্যাঙ্গেল হয়েছে কিন্তু স্লাব দেয়া হয়নি। গত এক বছরেরও বেশী সময় ধরে প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকায় সীমাহীন দূর্ভোগে পড়েছেন এসব এলাকার মানুষ।

পটুয়াখালী এলজিইডি সূত্র জানায়, ২০২১-২২, ২০২২-২৩, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপিভুক্ত প্রকল্পের আওতায় পিরোজপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দীন মহারাজের মালিকানাধীন ইফতি ইটিসিএল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ৯৩ কোটি ২১ লাখ ৭৬ হাজার ৫২ টাকার মোট ২৩টি প্রকল্পের কার্যাদেশ দেয় পটুয়াখালী এলজিইডি। এ প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- গলাচিপা উপজেলায় তিনটি, মির্জাগঞ্জে চারটি, কলাপাড়ায় দুটি, দুমকীতে একটি, রাঙ্গাবালীতে একটি ও সদর উপজেলায় ১২টি।

৪ বছর পার হয়ে গেলে সরেজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা যায়, জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার মাধাবখালী ইউনিয়ন আশ্রয়ণ প্রকল্প সংলগ্ন শ্রীমন্ত নদের উপর আরসিসি আয়রণ ব্রিজ, কাকড়াবুনিয়া মাহমুদিয়া কারিমিয়া মাদ্রাসার সামনে ১৫ মিটার আয়রণ ব্রিজ, বেরেরধন খালের উপর সিকদার বাড়ি মসজিদ রোডে ৪৮ মিটার আয়রণ ব্রিজ, উত্তর আমড়াগাছিয়া কাশিনাথ স্লুইস সংলগ্ন ১৮ মিটার আয়রণ ব্রিজসহ রামপুরা, মজিদবাড়িয়া, কেওয়া বুনিয়া, গাবুয়া আমড়াঝুড়ি ও দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া এলাকার উল্লেখিত প্রকল্পগুলোর কাজই শুরু করেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

এলজিইডির পক্ষ থেকে ২৩টি প্রকল্পের মধ্যে দুটির কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে দাবি করে বাকি প্রকল্পের কাজ ৬০ থেকে ৭০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করা হয়। তবে সরেজমিনে অধিকাংশ প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি শতকরা ৫০ ভাগের নীচে প্রতিয়মান হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে মহিউদ্দীন মহারাজের পরিবার ৬টি ঠিকাদারী লাইসেন্সের বিপরীতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) একচেটিয়া রাজত্ব কায়েম করেছিল। মহারাজের ছোট ভাই ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিরাজুল নিয়ন্ত্রণ করতেন এই সিন্ডিকেট। এলজিইডিতে মিরাজ-মহারাজ সিন্ডিকেট নামে পরিচিত ছিলেন তারা।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, এলজিইডি’র বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ না করেই কয়েক হাজার কোটি টাকা তুলে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে এই দুই ভাইর বিরুদ্ধে। এ কারণে পিরোজপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী, হিসাবরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তাসহ সিন্ডিকেটের কয়েকজনের নামে আটটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

পিরোজপুর জেলা দুদক কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন অভিযোগে মিরাজ-মহারাজসহ তার পরিবারের চার জনের নামে আটটি মামলা করেছে দুদক। এ সকল মামলায় স্থানীয় এলজিইডি, জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকেও আসামি করা হয়েছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মহারাজ পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পটুয়াখালী এলজিইডির প্রথম শ্রেণীর এক ঠিকাদার বলেন, পটুয়াখালীর যে কাজগুলো স্থবির হয়ে পড়ে আছে তার জন্য মূলত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দায়ী নয়। তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে পটুয়াখালীর স্থানীয় ঠিকাদাররা এই কাজগুলো বাস্তবায়ন করছিলো। যারা এই কাজগুলো করছিলেন তাদের মধ্যে পটুয়াখালী আওয়ামী লীগ ঘারানার অনেক ঠিকাদার যেমন ছিলেন তেমনি পেশাদার ঠিকাদাররাও ছিলেন। আমি নিজে ইফতি ইটিসিএল এর লাইসেন্সের মাধ্যমে পটুয়াখালী এলজিইডির ১৩টি কাজ বাস্তবায়ন করেছি।

তিনি বলেন, আমার নেয়া কাজগুলো ৬৫ থেকে ৭৫ ভাগ সম্পন্ন করে ফেলেছি। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি যাতে দ্রুত কাজ শেষ করা যায়। কিন্তু ০৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তন হলে ইফতি ইটিসিএল’র মালিকরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং দুদকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করে দেয় সরকার। আর এতেই স্থানীয় সব সাব-ঠিকাদাররা পড়েন মহাবিপাকে। আমার প্রায় ১৬ কোটি টাকার বিল আটকে আছে এলজিইডিতে।

সরকার তদন্ত করে যে বা যারা মাঠে কাজ করছে তাদের বিল প্রদানের ব্যবস্থা করলে খুব দ্রুত কাজ সম্পন্ন হবে বলে দাবি করেন তিনি।

কুয়াকাটা-ঢাকা মহাসড়কের সদর উপজেলার করমজাতলা থেকে পটুয়াখালী-বাউফল-দশমিনা আঞ্চলিক মহাসড়কের লোহালিয়া সেতুর সংযোগ সড়ক, পৌর শহরের ১ নং ওয়াডের বহালগাছিয়া এলাকায় লোহালিয়া ব্রিজ-হেতালিয়া বাঁধ সড়ক, গলাচিপা উপজেলার ছোনখোলা সড়ক, মির্জাগঞ্জের চরখালী, কাকড়াবুনিয়া, মজিদবাড়িয়া, দক্ষিণ মজিদবাড়িয়া, রামপুরা, কেওয়াবুনিয়া এবং রাঙ্গাবালীর আমলীবাড়িয়া, দক্ষিণ কাজির হাওলা, কাছিয়াবুনিয়া বাজার, দুমকী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও আয়রণ ব্রিজের কাজ সবগুলোরই একই অবস্থা। গত এক বছর ধরে প্রকল্পগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।

পটুয়াখালী পৌর শহর সংলগ্ন জাফর গাজী (৫৫), আনসার হাওলাদার (৭০), হোসনে আরা বেগম (৬৫) সহ স্থানীয়রা জানান, আগে কাঁচা রাস্তা ছিলো তাও ভালো ছিলো। কাঁদার মধ্যে দিয়ে মানুষ চলাচল করতে পারতো। গত এক বছরের বেশী সময় ধরে রাস্তার কাজ বন্ধ। মাটি কেটে রাখা হয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় খোয়া ফেলেছে। এখন এমন অবস্থা হয়েছে মানুষ যে হেঁটে পাকা সড়কে উঠবে তারও কোনো উপায় নাই। এমনকি মসজিদে যে নামাজ পড়তে যাবে তাও তারা যেতে পারছেনা।


আরও খবর পড়ুন: