১১:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পটুয়াখালীতে দুইশত বছরের ঐতিহ্যবাহী মহেন্দ্র পাগলের আশ্রমে মেলা অনুষ্ঠিত

পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ দুইশত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী ফুলতলা মহেন্দ্র পাগলের আশ্রমে মেলা। শত শত দর্শনার্থীদের পদচারনায় উৎসব মুখর ও মনোরম পরিবেশের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা। কিন্তু সরকারি সাহায্য সহযোগিতার অভাবে এ মেলা বিলুপ্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। পটুয়াখালীর বাউফল পৌর শহরের ফুলতলার মহেন্দ্র পাগলের আশ্রমের সেই প্রাচীনতম গাছটি (স্থানীয় ভাষায় পাহোইর গাছ) আজও মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে কালের স্বাক্ষী হয়ে। গাছটি প্রায় এক একর জমি জুড়ে ডালপালা ছড়িয়ে রয়েছে। গাছটির বয়স কারো কারো মতে দেড়শ-দুই শ’ বছর হবে। আর এই গাছের নীচে আশ্রয় নিয়েছিল এক প্রসিদ্ধ পুরুষ। যার নাম মহেন্দ্র পাগল। তার ধর্মীয় জ্ঞাণ, সাধনার বলে প্রায় বিমোহিত হয়ে প্রায় দুই সহস্রাধিক শিষ্য তার কাছ থেকে দীক্ষাও নিয়েছিলো। গড়ে উঠে এখানে সনাতন ধর্মীয় উপসনালয়। এই গাছের তলায় গড়ে উঠেছে রাধাকৃষ্ণ মন্দির, নাট মন্দির। তিথি অনুযায়ী প্রতিবছর চৈত্র মাসের ১০ তারিখ রাত বারটায় অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ মেলা। এই দিনে শতশত হিন্দু ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের নারী ও পুরুষ বিভিন্ন মানত করে মনবাসনা পূর্ণ করার জন্য এখানে আশে। এ কারণে মহেন্দ্র পাগলের তীরধাম হয়ে ওঠে পূণ্যার্থীদের পদচারণায় মুখরিত। তবে এ মেলা বসে ৫ দিন ব্যাপি। পরিচিত হয় মহেন্দ্র পাগলের বিশ্বকল্যাণ গীতাশ্রম। এক এক করে প্রায় ৫৫ বছর ধরে পাগলের নামে কীর্ত্তন, পালাগান, বাউলগান, কবিগানসহ নানা আয়োজনে বসে ধর্মীমেলায়। হিন্দু ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায় এই বৃক্ষকে মনবাসনা পূর্ণ করার আশায় শ্রদ্ধা করে তৈল, সিঁদুর, সুতা, মোমবাতি ও আগর বাতি দিয়ে পুজা আর্চনা করেন তারা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাধূ সন্যাসীদের আগমন ঘটে। শুধু বৃক্ষকে ঘিরেই পুজার্চনাই নয়, পৌর এলাকার দক্ষিন পাশে ডাল পালায় পরিপূর্ণ গাছটি পথচারীদের আশ্রয়স্থল হিসাবেও ছায়া দিচ্ছে।

এই গাছ সম্পর্কে দুর দুরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা জানান, প্রায় দুইশ বছর আগের পুরনো এ মন্দির। এখানে প্রতি বছর চৈত্র মাসের ১০ তারিখ মেলা শুরু হয়ে ১৫ তারিখ পর্যন্ত উদযাপিত হয়। এ মন্দির প্রতিষ্ঠা করে মহেন্দ্র পাগল। পুর্ব পুরুষরা পরিচালনা করেন। এখন আমরা পরিচালনা করে আসছি। মেলা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিনাল সিকদার বলেন, বিশ্ব কল্যান গীতা আশ্রমের আয়োজনে যে মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্ভিক সহযোগীতা করা হচ্ছে।

এমতাবস্থায় সরকারি প্রশাসনিক ও আর্থিক সাহায্যের একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করেন অনেকেই। এককালীন ও বাৎসরিক সরকারি অনুদান পেলে মেলার আঙ্গিনার বিস্তৃৃতি ও মন্দির পুনঃসংস্কারের মধ্য দিয়ে মেলাটি আবার ফিরে পাবে তার পূর্ণ উদ্যম, উৎসাহ-উদ্দীপনা, দুইশত বছরের পুরনো লৌকিক ও ধর্মীয় কৃষ্টি সংস্কৃতির ঐতিহ্য যা মেলাটিকে নব যৌবনে সিক্ত করে প্রাণোচ্ছল ও প্রাণস্পন্দনের সম্মিলনে সঞ্জিবনী শক্তির সঞ্চার সাধন করবে বলে বিশ্বাস তাদের।

Tag:

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সেইভ করুন:

আমাদের সম্পর্কে জানুন:

South BD News 24

South BD News 24 is committed to publish the daily news of South Bengal based on authenticity, honesty and courage...
জনপ্রিয়

জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ উপলক্ষে পটুয়াখালীর টাউন বহালগাছিয়া সঃ প্রাঃ স্কুলে চিত্রাংকন ও স্কুল ফিডিং অনুষ্ঠিত 

error: Content is protected !!

পটুয়াখালীতে দুইশত বছরের ঐতিহ্যবাহী মহেন্দ্র পাগলের আশ্রমে মেলা অনুষ্ঠিত

আপডেট সময়: ০৩:১১:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ মার্চ ২০২৪

পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ দুইশত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী ফুলতলা মহেন্দ্র পাগলের আশ্রমে মেলা। শত শত দর্শনার্থীদের পদচারনায় উৎসব মুখর ও মনোরম পরিবেশের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা। কিন্তু সরকারি সাহায্য সহযোগিতার অভাবে এ মেলা বিলুপ্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। পটুয়াখালীর বাউফল পৌর শহরের ফুলতলার মহেন্দ্র পাগলের আশ্রমের সেই প্রাচীনতম গাছটি (স্থানীয় ভাষায় পাহোইর গাছ) আজও মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে কালের স্বাক্ষী হয়ে। গাছটি প্রায় এক একর জমি জুড়ে ডালপালা ছড়িয়ে রয়েছে। গাছটির বয়স কারো কারো মতে দেড়শ-দুই শ’ বছর হবে। আর এই গাছের নীচে আশ্রয় নিয়েছিল এক প্রসিদ্ধ পুরুষ। যার নাম মহেন্দ্র পাগল। তার ধর্মীয় জ্ঞাণ, সাধনার বলে প্রায় বিমোহিত হয়ে প্রায় দুই সহস্রাধিক শিষ্য তার কাছ থেকে দীক্ষাও নিয়েছিলো। গড়ে উঠে এখানে সনাতন ধর্মীয় উপসনালয়। এই গাছের তলায় গড়ে উঠেছে রাধাকৃষ্ণ মন্দির, নাট মন্দির। তিথি অনুযায়ী প্রতিবছর চৈত্র মাসের ১০ তারিখ রাত বারটায় অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ মেলা। এই দিনে শতশত হিন্দু ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের নারী ও পুরুষ বিভিন্ন মানত করে মনবাসনা পূর্ণ করার জন্য এখানে আশে। এ কারণে মহেন্দ্র পাগলের তীরধাম হয়ে ওঠে পূণ্যার্থীদের পদচারণায় মুখরিত। তবে এ মেলা বসে ৫ দিন ব্যাপি। পরিচিত হয় মহেন্দ্র পাগলের বিশ্বকল্যাণ গীতাশ্রম। এক এক করে প্রায় ৫৫ বছর ধরে পাগলের নামে কীর্ত্তন, পালাগান, বাউলগান, কবিগানসহ নানা আয়োজনে বসে ধর্মীমেলায়। হিন্দু ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায় এই বৃক্ষকে মনবাসনা পূর্ণ করার আশায় শ্রদ্ধা করে তৈল, সিঁদুর, সুতা, মোমবাতি ও আগর বাতি দিয়ে পুজা আর্চনা করেন তারা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাধূ সন্যাসীদের আগমন ঘটে। শুধু বৃক্ষকে ঘিরেই পুজার্চনাই নয়, পৌর এলাকার দক্ষিন পাশে ডাল পালায় পরিপূর্ণ গাছটি পথচারীদের আশ্রয়স্থল হিসাবেও ছায়া দিচ্ছে।

এই গাছ সম্পর্কে দুর দুরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা জানান, প্রায় দুইশ বছর আগের পুরনো এ মন্দির। এখানে প্রতি বছর চৈত্র মাসের ১০ তারিখ মেলা শুরু হয়ে ১৫ তারিখ পর্যন্ত উদযাপিত হয়। এ মন্দির প্রতিষ্ঠা করে মহেন্দ্র পাগল। পুর্ব পুরুষরা পরিচালনা করেন। এখন আমরা পরিচালনা করে আসছি। মেলা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিনাল সিকদার বলেন, বিশ্ব কল্যান গীতা আশ্রমের আয়োজনে যে মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্ভিক সহযোগীতা করা হচ্ছে।

এমতাবস্থায় সরকারি প্রশাসনিক ও আর্থিক সাহায্যের একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করেন অনেকেই। এককালীন ও বাৎসরিক সরকারি অনুদান পেলে মেলার আঙ্গিনার বিস্তৃৃতি ও মন্দির পুনঃসংস্কারের মধ্য দিয়ে মেলাটি আবার ফিরে পাবে তার পূর্ণ উদ্যম, উৎসাহ-উদ্দীপনা, দুইশত বছরের পুরনো লৌকিক ও ধর্মীয় কৃষ্টি সংস্কৃতির ঐতিহ্য যা মেলাটিকে নব যৌবনে সিক্ত করে প্রাণোচ্ছল ও প্রাণস্পন্দনের সম্মিলনে সঞ্জিবনী শক্তির সঞ্চার সাধন করবে বলে বিশ্বাস তাদের।