১২:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাউফলে সেই মাদ্রাসার তালা ভাঙ্গার ভিডিও ভাইরাল, সার্বিক বিষয়ে তদন্ত সম্পন্ন, দ্রুত ব্যবস্থা 

এম জাফরান হারুন, বাউফল, পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার দাসপাড়া ইউনিয়নের সেই উত্তর দাসপাড়া দাখিল মাদ্রাসার লাইব্রেরীর তালা ভাঙ্গার মুহূর্তে করা ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, গনিত এর সহকারী শিক্ষক মোঃ শফিউল ফরহাদ নামে একজন শিক্ষক তালা শক্ত জাতীয় বস্তু দিয়ে আঘাত করে ভাঙ্গছেন। পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করছেন মৌলভী মোঃ মাসুম বিল্লাহ, জুনিয়র মৌলভী মোঃ আইয়ুব আলী ও করনিক মোঃ মিজানুর রহমান সহ আরও কয়েকজন।

তালা ভাঙ্গার ব্যাপারে জানতে চাইলে গনিত এর সহকারী শিক্ষক মোঃ শফিউল ফরহাদ তালা ভাঙ্গার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, যেদিন তালা ভাঙ্গা হয়েছে তার আগের দিন আমি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যথারীতি প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দেখি আমাদের প্রশাসনিক রুমে ৩ টা তালা মারা। তখন প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা মৌলভী মোঃ মাসুম বিল্লাহ হুজুর, যাকে অত্র মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার হিসেবে ইউএনও দায়িত্ব দিয়েছেন তাকে। তাই প্রশাসনিক রুম তার। তালা মারার দায়িত্বও তার। সেখানে সভাপতি ও সাবেক সুপার নজির উদ্দিন মৃধার প্রশাসনিক রুমে তালা দেওয়ার এখতিয়ার নেই। তার পরে আমরা ইউএনও স্যারকে বিষয়টি জানাই। ইউএনও স্যার সভাপতিকে একাধিক বার ফোন করলে তিনি রিসিভ করেননি। তাই স্যার মৌলভী মোঃ মাসুম বিল্লাহকে আমাদেরকে প্রশাসনিক রুমে সরকারি তালা রেখে অন্য তালা ভেঙ্গে ফেলার কথা বললে আমরা ওই তালা ভেঙ্গে ফেলি।

উল্লেখ্য, গত রোববার (৩১ আগস্ট-২৫) বিধি মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাদ্রাসা এডহক কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মোঃ নজির উদ্দিন মৃধা।

অভিযোগে জানান, গত ২৭/০৮/২৫ ইং তারিখে আনুমানিক সাড়ে ৯ টার সময় মাদ্রাসার সাবেক ভারপ্রাপ্ত সুপার মৌলভী মোঃ মাসুম বিল্লাহর নেতৃত্বে শরীর চর্চা সহকারী শিক্ষক মোঃ সোহাগ হোসেন সিকদার, গনিত এর সহকারী শিক্ষক মোঃ শফিউল ফরহাদ, জুনিয়র মৌলভী মোঃ আইয়ুব আলী, করনিক মোঃ মিজানুর রহমান সহ ওই সাবেক ভারপ্রাপ্ত সুপার মৌলভী মোঃ মাসুম বিল্লাহর দুই ছেলেকে নিয়ে যৌথভাবে লোহার হাতুড়ি, লোহার রড ও শাবল দিয়ে অভিযান চালিয়ে শিক্ষক লাইব্রেরীর পাশে থাকা সুপার ও সভাপতির আলাদা রুমের ব্যবহৃত রুমের তালা ভেঙ্গে রুমে প্রবেশ করে এবং রুমের মধ্যে থাকা সুপারের চেয়ার বাহিরে কাদার মধ্যে ফেলে দেয় এবং সংরক্ষিত দলিলপত্র সহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র তছনছ করে। বাধা দিলে তারা মারতে আসে।

তিনি লিখিত অভিযোগে আরও জানান, বিগত ইং ০১/০৯/২৪ তারিখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় অনুষ্ঠিত ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমাকে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব প্রদান করলে ওইদিনও তারা আমার ওপর অতর্কিত হামলা করে আমাকে লজ্জিত করে। তাই উপরোক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান।

এব্যাপারে জানতে চাইলে মৌলভী মোঃ মাসুম বিল্লাহ (সহ সুপার) বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যখন এ মাদ্রাসার সভাপতি ছিলেন তখন গত ১/০৭/২৫ ইং তারিখে আমাকে ভারপ্রাপ্ত সুপার হিসেবে রেজুলিউশনের মাধ্যমে দায়িত্ব দেন। সেই থেকে আমি অদ্যাবধি দায়িত্ব পালন করে আসছি। কিন্তু গত কয়েকদিন আগে সাবেক ভারপ্রাপ্ত সুপার মোঃ নজির উদ্দিন মৃধা ও বিতর্কিত এডহক কমিটির সভাপতি মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ মিলে আমার দেওয়া তালার ওপরে দুইটা তালা মেরে দেয়। তালা ভাঙ্গার ব্যাপারে আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট। বরং তাদের দোষ ঢাকতে এহেন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত তারা। যার দরুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আমি অভিযোগ দিয়েছি।

মাদ্রাসার এডহক কমিটির সভাপতি মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, অভিযোগ হাতে পেয়েছি। নিরসনের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, ওই মাদ্রাসার তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। যাহার প্রতিবেদন বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। তারা দ্রুতই ব্যবস্থা নিবেন।

Tag:

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সেইভ করুন:

আমাদের সম্পর্কে জানুন:

South BD News 24

South BD News 24 is committed to publish the daily news of South Bengal based on authenticity, honesty and courage...
জনপ্রিয়

জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ উপলক্ষে পটুয়াখালীর টাউন বহালগাছিয়া সঃ প্রাঃ স্কুলে চিত্রাংকন ও স্কুল ফিডিং অনুষ্ঠিত 

error: Content is protected !!

বাউফলে সেই মাদ্রাসার তালা ভাঙ্গার ভিডিও ভাইরাল, সার্বিক বিষয়ে তদন্ত সম্পন্ন, দ্রুত ব্যবস্থা 

আপডেট সময়: ০৯:০৪:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এম জাফরান হারুন, বাউফল, পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার দাসপাড়া ইউনিয়নের সেই উত্তর দাসপাড়া দাখিল মাদ্রাসার লাইব্রেরীর তালা ভাঙ্গার মুহূর্তে করা ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, গনিত এর সহকারী শিক্ষক মোঃ শফিউল ফরহাদ নামে একজন শিক্ষক তালা শক্ত জাতীয় বস্তু দিয়ে আঘাত করে ভাঙ্গছেন। পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করছেন মৌলভী মোঃ মাসুম বিল্লাহ, জুনিয়র মৌলভী মোঃ আইয়ুব আলী ও করনিক মোঃ মিজানুর রহমান সহ আরও কয়েকজন।

তালা ভাঙ্গার ব্যাপারে জানতে চাইলে গনিত এর সহকারী শিক্ষক মোঃ শফিউল ফরহাদ তালা ভাঙ্গার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, যেদিন তালা ভাঙ্গা হয়েছে তার আগের দিন আমি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যথারীতি প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দেখি আমাদের প্রশাসনিক রুমে ৩ টা তালা মারা। তখন প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা মৌলভী মোঃ মাসুম বিল্লাহ হুজুর, যাকে অত্র মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার হিসেবে ইউএনও দায়িত্ব দিয়েছেন তাকে। তাই প্রশাসনিক রুম তার। তালা মারার দায়িত্বও তার। সেখানে সভাপতি ও সাবেক সুপার নজির উদ্দিন মৃধার প্রশাসনিক রুমে তালা দেওয়ার এখতিয়ার নেই। তার পরে আমরা ইউএনও স্যারকে বিষয়টি জানাই। ইউএনও স্যার সভাপতিকে একাধিক বার ফোন করলে তিনি রিসিভ করেননি। তাই স্যার মৌলভী মোঃ মাসুম বিল্লাহকে আমাদেরকে প্রশাসনিক রুমে সরকারি তালা রেখে অন্য তালা ভেঙ্গে ফেলার কথা বললে আমরা ওই তালা ভেঙ্গে ফেলি।

উল্লেখ্য, গত রোববার (৩১ আগস্ট-২৫) বিধি মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাদ্রাসা এডহক কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মোঃ নজির উদ্দিন মৃধা।

অভিযোগে জানান, গত ২৭/০৮/২৫ ইং তারিখে আনুমানিক সাড়ে ৯ টার সময় মাদ্রাসার সাবেক ভারপ্রাপ্ত সুপার মৌলভী মোঃ মাসুম বিল্লাহর নেতৃত্বে শরীর চর্চা সহকারী শিক্ষক মোঃ সোহাগ হোসেন সিকদার, গনিত এর সহকারী শিক্ষক মোঃ শফিউল ফরহাদ, জুনিয়র মৌলভী মোঃ আইয়ুব আলী, করনিক মোঃ মিজানুর রহমান সহ ওই সাবেক ভারপ্রাপ্ত সুপার মৌলভী মোঃ মাসুম বিল্লাহর দুই ছেলেকে নিয়ে যৌথভাবে লোহার হাতুড়ি, লোহার রড ও শাবল দিয়ে অভিযান চালিয়ে শিক্ষক লাইব্রেরীর পাশে থাকা সুপার ও সভাপতির আলাদা রুমের ব্যবহৃত রুমের তালা ভেঙ্গে রুমে প্রবেশ করে এবং রুমের মধ্যে থাকা সুপারের চেয়ার বাহিরে কাদার মধ্যে ফেলে দেয় এবং সংরক্ষিত দলিলপত্র সহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র তছনছ করে। বাধা দিলে তারা মারতে আসে।

তিনি লিখিত অভিযোগে আরও জানান, বিগত ইং ০১/০৯/২৪ তারিখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় অনুষ্ঠিত ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমাকে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব প্রদান করলে ওইদিনও তারা আমার ওপর অতর্কিত হামলা করে আমাকে লজ্জিত করে। তাই উপরোক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান।

এব্যাপারে জানতে চাইলে মৌলভী মোঃ মাসুম বিল্লাহ (সহ সুপার) বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যখন এ মাদ্রাসার সভাপতি ছিলেন তখন গত ১/০৭/২৫ ইং তারিখে আমাকে ভারপ্রাপ্ত সুপার হিসেবে রেজুলিউশনের মাধ্যমে দায়িত্ব দেন। সেই থেকে আমি অদ্যাবধি দায়িত্ব পালন করে আসছি। কিন্তু গত কয়েকদিন আগে সাবেক ভারপ্রাপ্ত সুপার মোঃ নজির উদ্দিন মৃধা ও বিতর্কিত এডহক কমিটির সভাপতি মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ মিলে আমার দেওয়া তালার ওপরে দুইটা তালা মেরে দেয়। তালা ভাঙ্গার ব্যাপারে আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট। বরং তাদের দোষ ঢাকতে এহেন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত তারা। যার দরুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আমি অভিযোগ দিয়েছি।

মাদ্রাসার এডহক কমিটির সভাপতি মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, অভিযোগ হাতে পেয়েছি। নিরসনের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, ওই মাদ্রাসার তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। যাহার প্রতিবেদন বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। তারা দ্রুতই ব্যবস্থা নিবেন।