০৩:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পটুয়াখালীতে গ্রামীণ শিল্প পণ্য মেলা বন্ধের দাবি ১৮২ ব্যবসায়ীর

জালাল আহমেদ, প্রধান প্রতিবেদকঃ পটুয়াখালীতে চলছে মাসব্যাপী গ্রামীণ শিল্প পণ্য মেলা। মেলার মাঠে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি উপচে পড়া মানুষের ঢল। তবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষা চলাকালে গ্রামীণ শিল্প পণ্য বাণিজ্য মেলা আয়োজনের ফলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হওয়ায় অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে।

এদিকে গ্রামীণ শিল্প পণ্য বাণিজ্য মেলা মাসব্যাপী অয়োজনের ফলে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। মেলার আয়োজনের ফলে ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন তারা। ফলে ব্যবসায়ীরা মেলার সময় না বাড়িয়ে বন্ধের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে সামিয়া এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান পটুয়াখালী শহরের পিডিএসএ মাঠে মাসব্যাপী গ্রামীণ শিল্পপ পণ্য মেলার আয়োজন করে। গত ১৪ নভেম্বর বিকেল ৫ টায় জেলা প্রশাসক আবুল হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন প্রধান অতিথি হিসেবে এ মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে মেলার বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন।

আয়োজকরা জানান, এই বাণিজ্য মেলায় ১০০টি স্টলের মধ্যে ক্রোকারিজ সামগ্রী, খাদ্য সামগ্রী, তাঁত বস্ত্র, গার্মেন্টস, ভ্যারাইটি সামগ্রী, গিফট কর্ণার ও খেলনা সামগ্রী ছাড়াও ছোট ছোট সোনামনিদের বিনোদনে নাগরদোলাসহ বেশ কয়েকটি রাইডস, সার্কাস ও মৃত্যুকূপে প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলের প্রদর্শনী রয়েছে। মেলা প্রতিদিন বিকেল ৩টা হতে রাত ১১টা পর্যন্ত সকলের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।

এদিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেলা প্রাঙ্গন বিকেল ৩ টায় খোলার কথা থাকলেও সকাল থেকেই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা মেলার মাঠে ভিড় করছে। অনেকে পরীক্ষা দিয়েই দুপুরে সহপাঠিদের নিয়ে ছুটছে মেলা প্রাঙ্গনে। স্কুল ড্রেস পরিহিত অনেক শিক্ষার্থী ক্লাস ফাঁকি দিয়ে এ মেলায় প্রবেশ করে সময় কাটাচ্ছেন। এতে করে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের লেখাপড়া নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

গ্রামীণ শিল্প পণ্য বাণিজ্য মেলা নিয়ে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। সকল শ্রেণির মানুষ মেলামুখী হওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতা শূন্য হয়ে পড়েছে। মেলার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এদিকে মেলার সময়সীমা বাড়ানোর জন্য আয়োজকরা তদবির ও প্রচারণা চালাচ্ছেন। এই অবস্থায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মেলার সময় না বাড়িয়ে মেলা বন্ধ করার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

১৮২ জন ব্যবসায়ীর স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগে বলা হয়, পটুয়াখালী পিডিএসএ মাঠে চলমান গ্রামীণ শিল্প পণ্য মেলার কারণে স্থানীয় সকল ব্যবসায়ীগন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বর্তমান শীত মৌসুম থাকা সত্বেও মেলা থাকার কারণে ক্রেতাগন তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আসছে না। যার পরিপ্রেক্ষিতে বেচা-কেনার অবস্থা খুবই খারাপ। পৌর ট্রেড লাইসেন্স, ইনকাম ট্যাক্স, ভ্যাট দিয়ে এবং ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে দোকান ভাড়া, কর্মচারী বেতন, বিদ্যুৎ বিল সহ বিভিন্ন ব্যায় নির্বাহ করতে পাছেন না তারা। ১৫ ডিসেম্বর মেলা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা জানতে পেরেছে, মেলার সময় বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। মেলার সময় বৃদ্ধি করা হলে ব্যবসায়ীদের পথে বসা ছাড়া উপায় থাকবে না। এই অবস্থায় মেলার সময় বৃদ্ধি না করে বন্ধ করার জন্য দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এ ব্যাপারে মেলার আয়োজক মোঃ ম‌নির হো‌সেন জানান, “জেলা প্রশস‌নের সা‌র্বিক সহ‌যোগীতায় এবং ব‌রিশা‌লের মেসার্স সা‌মিউল এন্টারপ্রাইজ‘র ব‌্যবস্থপনায় এ মেলা শুরু হয়। আগামী ১৩ ডি‌সেম্বর শেষ হ‌বে।”

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আবুল হাসনাত মো. আরেফিন বলেন, “ব্যবসায়ীদের অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হবে।”

Tag:

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সেইভ করুন:

আমাদের সম্পর্কে জানুন:

South BD News 24

South BD News 24 is committed to publish the daily news of South Bengal based on authenticity, honesty and courage...
জনপ্রিয়

জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ উপলক্ষে পটুয়াখালীর টাউন বহালগাছিয়া সঃ প্রাঃ স্কুলে চিত্রাংকন ও স্কুল ফিডিং অনুষ্ঠিত 

error: Content is protected !!

পটুয়াখালীতে গ্রামীণ শিল্প পণ্য মেলা বন্ধের দাবি ১৮২ ব্যবসায়ীর

আপডেট সময়: ০৮:৫২:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪

জালাল আহমেদ, প্রধান প্রতিবেদকঃ পটুয়াখালীতে চলছে মাসব্যাপী গ্রামীণ শিল্প পণ্য মেলা। মেলার মাঠে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি উপচে পড়া মানুষের ঢল। তবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষা চলাকালে গ্রামীণ শিল্প পণ্য বাণিজ্য মেলা আয়োজনের ফলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হওয়ায় অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে।

এদিকে গ্রামীণ শিল্প পণ্য বাণিজ্য মেলা মাসব্যাপী অয়োজনের ফলে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। মেলার আয়োজনের ফলে ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন তারা। ফলে ব্যবসায়ীরা মেলার সময় না বাড়িয়ে বন্ধের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে সামিয়া এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান পটুয়াখালী শহরের পিডিএসএ মাঠে মাসব্যাপী গ্রামীণ শিল্পপ পণ্য মেলার আয়োজন করে। গত ১৪ নভেম্বর বিকেল ৫ টায় জেলা প্রশাসক আবুল হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন প্রধান অতিথি হিসেবে এ মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে মেলার বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন।

আয়োজকরা জানান, এই বাণিজ্য মেলায় ১০০টি স্টলের মধ্যে ক্রোকারিজ সামগ্রী, খাদ্য সামগ্রী, তাঁত বস্ত্র, গার্মেন্টস, ভ্যারাইটি সামগ্রী, গিফট কর্ণার ও খেলনা সামগ্রী ছাড়াও ছোট ছোট সোনামনিদের বিনোদনে নাগরদোলাসহ বেশ কয়েকটি রাইডস, সার্কাস ও মৃত্যুকূপে প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলের প্রদর্শনী রয়েছে। মেলা প্রতিদিন বিকেল ৩টা হতে রাত ১১টা পর্যন্ত সকলের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।

এদিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেলা প্রাঙ্গন বিকেল ৩ টায় খোলার কথা থাকলেও সকাল থেকেই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা মেলার মাঠে ভিড় করছে। অনেকে পরীক্ষা দিয়েই দুপুরে সহপাঠিদের নিয়ে ছুটছে মেলা প্রাঙ্গনে। স্কুল ড্রেস পরিহিত অনেক শিক্ষার্থী ক্লাস ফাঁকি দিয়ে এ মেলায় প্রবেশ করে সময় কাটাচ্ছেন। এতে করে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের লেখাপড়া নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

গ্রামীণ শিল্প পণ্য বাণিজ্য মেলা নিয়ে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। সকল শ্রেণির মানুষ মেলামুখী হওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতা শূন্য হয়ে পড়েছে। মেলার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এদিকে মেলার সময়সীমা বাড়ানোর জন্য আয়োজকরা তদবির ও প্রচারণা চালাচ্ছেন। এই অবস্থায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মেলার সময় না বাড়িয়ে মেলা বন্ধ করার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

১৮২ জন ব্যবসায়ীর স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগে বলা হয়, পটুয়াখালী পিডিএসএ মাঠে চলমান গ্রামীণ শিল্প পণ্য মেলার কারণে স্থানীয় সকল ব্যবসায়ীগন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বর্তমান শীত মৌসুম থাকা সত্বেও মেলা থাকার কারণে ক্রেতাগন তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আসছে না। যার পরিপ্রেক্ষিতে বেচা-কেনার অবস্থা খুবই খারাপ। পৌর ট্রেড লাইসেন্স, ইনকাম ট্যাক্স, ভ্যাট দিয়ে এবং ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে দোকান ভাড়া, কর্মচারী বেতন, বিদ্যুৎ বিল সহ বিভিন্ন ব্যায় নির্বাহ করতে পাছেন না তারা। ১৫ ডিসেম্বর মেলা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা জানতে পেরেছে, মেলার সময় বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। মেলার সময় বৃদ্ধি করা হলে ব্যবসায়ীদের পথে বসা ছাড়া উপায় থাকবে না। এই অবস্থায় মেলার সময় বৃদ্ধি না করে বন্ধ করার জন্য দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এ ব্যাপারে মেলার আয়োজক মোঃ ম‌নির হো‌সেন জানান, “জেলা প্রশস‌নের সা‌র্বিক সহ‌যোগীতায় এবং ব‌রিশা‌লের মেসার্স সা‌মিউল এন্টারপ্রাইজ‘র ব‌্যবস্থপনায় এ মেলা শুরু হয়। আগামী ১৩ ডি‌সেম্বর শেষ হ‌বে।”

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আবুল হাসনাত মো. আরেফিন বলেন, “ব্যবসায়ীদের অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হবে।”