০৪:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তামিলনাড়ুর উৎসব

আজ সকাল সকাল হাসপাতাল যাওয়ার কথা। কিন্তু বের হতে দেরি হল। রাস্তায় এসে দেখি, ২/১টি প্রাইভেট কার ছাড়া অন্য কোন গাড়ি নেই। পাশের স্কুল দুটিও বন্ধ। হেটে গেলে দেরি হয়ে যাবে। দ্রুত অটো স্ট্যান্ড এ যেয়ে দেখি, অটো ড্রাইভার সাদা ধবধবে লুঙ্গী (তামিলনাড়ুর স্টাইলে) নতুন চকচকে শার্ট পরে বসে আছেন, অটোও সাজানো। ভয়ে ভয়ে জানতে চাই যাবে কিনা, সে খুব খুশি হয়ে বলল, চলো। এখানকার লোকজন হিন্দি বোঝে না। কিছু লোক ইংরেজি বলতে পারে। সবাই তামিল ভাষায় কথা বলে। ওর কাছে জানতে পারলাম আজকে ওদের ফেস্টিভ্যাল। হসপিটালের সামনে এসে দেখি এলাহি কান্ড! সিস্টার ও তাদের সহযোগীরা কলাগাছ, আম পাতা, ফুল, আল্পনা একে সাজাতে ব্যস্ত। ফার্মেসীর সামনেও একই চিত্র।দ্রুত ইঞ্জেকশন কিনে, একজন সিস্টারকে ধরে পুস করে নিলাম। পুজো করার জন্য ঠাকুর এসে গেছেন, ডাক্তার, নার্স সবাই এসে লাইন ধরে দাঁড়ালেন। তাদের এই উৎসবের নাম-আইদা পূজা। আজকে তারা একটি স্পেসাল খাবার খাবে, তার নাম পোংগল যা চাল,ঘি,মিষ্টি,নারিকেল,বিভিন্ন ধরনের বাদাম দিয়ে তৈরি করে।সব উৎসবে ওরা এটা খায়।
শরীরটা বেশ খারাপই ছিল।তারপর ও ভাবলাম হেটে যাই, দেখি ওরা কি কি করে। কোথাও ঢাক বা সাউন্ড বক্সের শব্দ শুনলাম না। সবাই যার যা কিছু আছে- বাড়ি,গাড়ি, ভ্যান,দোকান সব কিছু সাজাতে ব্যাস্ত ।নিজেরাও নতুন পোশাক পরে সেজেগুজে বের হয়েছে। অবাক হয়ে দেখলাম একজন বুড়ো লোক গাছের নিচে বসে ডাব বিক্রি করে। সে ঐ গাছটিকে সাজিয়েছে। তার কাছে এটাই তার মন্দির। সামনে আসছে- দীপাবলি। এখন থেকেই তার তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
হাসপাতালে একটি তামিল মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে। পথে ওর সাথে দেখা হল। একটু কাছে ডেকে নিয়ে বললো, মুভি দেখতে যাবে। নতুন একটি মুভি রিলিজ হয়েছে – লিও। ওকে খুশি করার জন্য বললাম কবে যাবে, ও বলল রবিবার আমার ছুটি, তোমার জন্য টিকেট সংগ্রহ করব। বললাম, তোমাকে পরে জানাব। মনে মনে বললাম, তোমাদের যে মিউজিক আমার মাথা ব্যাথা হয়ে যাবে। কিছুদিন পূর্বে কানিজের পীড়াপীড়িতে আমরা কয়েকজন প্রিয়তমা সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম। সিনেমা হলের লাইটিং এর যে অবস্থা কানিজকে বারবার জিজ্ঞেসা করছিলাম, এটা রাতের সিন না দিনের সিন। ও বললো, আপা, আমি আগে বুঝি। বুঝতে বুঝতে বিরতির সময় হল। কানিজ সবার জন্য মিরান্ডা ও পপকর্ন আনার ব্যবস্থা করল। কিন্তু বিরতির পর ছবিতো শুরু হয় না। কিছুক্ষণ পর একজন এসে বললেন, মেশিন নষ্ট, ঢাকা পাঠাতে হবে। দুদিন পরে আসেন। কি আর করা মিরান্ডার বোতল হাতে নিয়ে হল থেকে বের হলাম। এরপর আর হল না- না মুভি দেখা, না একসাথে স্টার, মল্লিকায় বা অন্য কোথাও বসে চা, কফি খেতে খেতে আড্ডা দেয়া।

লুৎফুন্নেছা লুৎফা, প্রধান শিক্ষিকা, ডোনাভান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পটুয়াখালী সদর, পটুয়াখালী।

Tag:

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সেইভ করুন:

আমাদের সম্পর্কে জানুন:

South BD News 24

South BD News 24 is committed to publish the daily news of South Bengal based on authenticity, honesty and courage...

পটুয়াখালীতে সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি পালন, পরীক্ষা বন্ধ, অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন 

error: Content is protected !!

তামিলনাড়ুর উৎসব

আপডেট সময়: ০৩:২২:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৩

আজ সকাল সকাল হাসপাতাল যাওয়ার কথা। কিন্তু বের হতে দেরি হল। রাস্তায় এসে দেখি, ২/১টি প্রাইভেট কার ছাড়া অন্য কোন গাড়ি নেই। পাশের স্কুল দুটিও বন্ধ। হেটে গেলে দেরি হয়ে যাবে। দ্রুত অটো স্ট্যান্ড এ যেয়ে দেখি, অটো ড্রাইভার সাদা ধবধবে লুঙ্গী (তামিলনাড়ুর স্টাইলে) নতুন চকচকে শার্ট পরে বসে আছেন, অটোও সাজানো। ভয়ে ভয়ে জানতে চাই যাবে কিনা, সে খুব খুশি হয়ে বলল, চলো। এখানকার লোকজন হিন্দি বোঝে না। কিছু লোক ইংরেজি বলতে পারে। সবাই তামিল ভাষায় কথা বলে। ওর কাছে জানতে পারলাম আজকে ওদের ফেস্টিভ্যাল। হসপিটালের সামনে এসে দেখি এলাহি কান্ড! সিস্টার ও তাদের সহযোগীরা কলাগাছ, আম পাতা, ফুল, আল্পনা একে সাজাতে ব্যস্ত। ফার্মেসীর সামনেও একই চিত্র।দ্রুত ইঞ্জেকশন কিনে, একজন সিস্টারকে ধরে পুস করে নিলাম। পুজো করার জন্য ঠাকুর এসে গেছেন, ডাক্তার, নার্স সবাই এসে লাইন ধরে দাঁড়ালেন। তাদের এই উৎসবের নাম-আইদা পূজা। আজকে তারা একটি স্পেসাল খাবার খাবে, তার নাম পোংগল যা চাল,ঘি,মিষ্টি,নারিকেল,বিভিন্ন ধরনের বাদাম দিয়ে তৈরি করে।সব উৎসবে ওরা এটা খায়।
শরীরটা বেশ খারাপই ছিল।তারপর ও ভাবলাম হেটে যাই, দেখি ওরা কি কি করে। কোথাও ঢাক বা সাউন্ড বক্সের শব্দ শুনলাম না। সবাই যার যা কিছু আছে- বাড়ি,গাড়ি, ভ্যান,দোকান সব কিছু সাজাতে ব্যাস্ত ।নিজেরাও নতুন পোশাক পরে সেজেগুজে বের হয়েছে। অবাক হয়ে দেখলাম একজন বুড়ো লোক গাছের নিচে বসে ডাব বিক্রি করে। সে ঐ গাছটিকে সাজিয়েছে। তার কাছে এটাই তার মন্দির। সামনে আসছে- দীপাবলি। এখন থেকেই তার তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
হাসপাতালে একটি তামিল মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে। পথে ওর সাথে দেখা হল। একটু কাছে ডেকে নিয়ে বললো, মুভি দেখতে যাবে। নতুন একটি মুভি রিলিজ হয়েছে – লিও। ওকে খুশি করার জন্য বললাম কবে যাবে, ও বলল রবিবার আমার ছুটি, তোমার জন্য টিকেট সংগ্রহ করব। বললাম, তোমাকে পরে জানাব। মনে মনে বললাম, তোমাদের যে মিউজিক আমার মাথা ব্যাথা হয়ে যাবে। কিছুদিন পূর্বে কানিজের পীড়াপীড়িতে আমরা কয়েকজন প্রিয়তমা সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম। সিনেমা হলের লাইটিং এর যে অবস্থা কানিজকে বারবার জিজ্ঞেসা করছিলাম, এটা রাতের সিন না দিনের সিন। ও বললো, আপা, আমি আগে বুঝি। বুঝতে বুঝতে বিরতির সময় হল। কানিজ সবার জন্য মিরান্ডা ও পপকর্ন আনার ব্যবস্থা করল। কিন্তু বিরতির পর ছবিতো শুরু হয় না। কিছুক্ষণ পর একজন এসে বললেন, মেশিন নষ্ট, ঢাকা পাঠাতে হবে। দুদিন পরে আসেন। কি আর করা মিরান্ডার বোতল হাতে নিয়ে হল থেকে বের হলাম। এরপর আর হল না- না মুভি দেখা, না একসাথে স্টার, মল্লিকায় বা অন্য কোথাও বসে চা, কফি খেতে খেতে আড্ডা দেয়া।

লুৎফুন্নেছা লুৎফা, প্রধান শিক্ষিকা, ডোনাভান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পটুয়াখালী সদর, পটুয়াখালী।