এম জাফরান হারুন, পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার গলাচিপা সদর ইউনিয়ন পরিষদের দ্বিতল কমপ্লেক্স ভবনটি ২০০৬ সালে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছিলো। স্থানীয় বোয়ালিয়া গ্রামের শাহ আলী তালুকদারের দান করা এক একর জমিতে নির্মিত এই ভবনে রয়েছে চেয়ারম্যানের কক্ষ, সচিবের কক্ষ, ইউপি সদস্যদের কক্ষ, হলরুম এবং আনসার-ভিডিপি ও গ্রাম পুলিশের জন্য আলাদা কক্ষ।
কিন্তু নির্মাণের ২০ বছর পরও এই ভবন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা এখানে আসেন না, কোনো কার্যক্রম চলে না। ফলে ভবনটি দিনে গরু-ছাগলের আশ্রয়স্থল এবং রাতে মাদকাসক্তদের ও নারী-নিয়ে আড্ডার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এই অবহেলার কারণে স্থানীয় জনগণকে সেবা পেতে অতিরিক্ত খরচ করে পৌর শহরে যেতে হচ্ছে, যা তাদের দুর্ভোগের মাত্রা বাড়িয়েছে। গলাচিপা সদর ইউনিয়ন পরিষদের ভবনটি এখন একটি পরিত্যক্ত কাঠামো। দরজা-জানালার বেশিরভাগই নেই, কক্ষগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি। মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে প্রাণীর মলমূত্র, নেশার দ্রব্যের খালি প্যাকেট এবং গরুর খড়কুটো। ছাদ ও দেয়ালে শেওলা ধরে কাঠামোর বিভিন্ন অংশ নষ্ট হয়ে গেছে। প্রবেশপথ কাদা-পানিতে অগম্য।
স্থানীয়রা জানান, দিনের বেলায় এলাকাবাসী এখানে গরু-ছাগল বাঁধেন এবং খড়কুটো রাখেন। সন্ধ্যা হলেই শুরু হয় মাদকাসক্তদের আড্ডা, যা চলে সকাল পর্যন্ত। এই অবস্থা গত ২০ বছর ধরে অপরিবর্তিত।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. পারভেজ বলেন, এই ইউনিয়ন পরিষদ অনেক বছর ধরে পরিত্যক্ত। দূর-দূরান্ত থেকে পোলাপানরা এসে নেশা করে, মেয়ে নিয়ে আসে। চেয়ারম্যানের একটা সাইন বা শালিশের জন্য ভাড়া দিয়ে গলাচিপা যেতে হয়, কিন্তু সেখানেও চেয়ারম্যান পাওয়া যায় না। আমরা হয়রানির শিকার। অতি দ্রুত এখানে কার্যক্রম শুরু হোক।
মো. আদের আলী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ এখন গরু-বাছুরের বাণ্ডিল। আমিও গরু বাঁধি। এখন এটা গরু খড়ের জায়গা হয়ে গেছে।
জনগণের দুর্ভোগ: সেবা থেকে বঞ্চিত ইউনিয়ন পরিষদের ভবন অকার্যকর থাকায় স্থানীয়রা সেবা পেতে গলাচিপা পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের একটি পুরানো ভবনে যেতে বাধ্য। এতে তাদের অতিরিক্ত ভাড়া খরচ করতে হয়। একটি সাধারণ স্বাক্ষর বা শালিশ-বিচারের জন্য দূর-দূরান্ত থেকে যাওয়া সত্ত্বেও অনেক সময় চেয়ারম্যান বা মেম্বারদের পাওয়া যায় না। এই হয়রানি স্থানীয়দের জীবনকে আরও জটিল করে তুলেছে।
কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া: আশ্বাসের মধ্যে সমাধানের অপেক্ষা ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক মোহাম্মদ জাফর রানা জানান, তিনি যোগদানের পর ভবনটি পরিদর্শন করেছেন এবং এর অবনতিশীল অবস্থা দেখেছেন। তিনি বলেন, ২০ বছর ব্যবহার না হওয়ায় ভবনটি গরু-ছাগলের আশ্রয়স্থল হয়েছে। রাতে নেশার আড্ডা বসে। আমি আবার পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহামুদুল হাসান বিষয়টি জানার পর বলেন, সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে বিষয়টি জানলাম। সরজমিনে পরিদর্শন করে জনদুর্ভোগ লাঘবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সম্ভাব্য সমাধান ও জনগণের প্রত্যাশা গলাচিপা সদর ইউনিয়নের বাসিন্দারা দ্রুত ভবনটি সংস্কার ও কার্যক্রম শুরুর দাবি জানিয়েছেন। তারা চান, এই ভবন পুনরায় জনগণের সেবায় ব্যবহৃত হোক, যাতে তাদের পৌর শহরে যাওয়ার খরচ ও হয়রানি কমে।
স্থানীয়রা প্রস্তাব করেছেন: ভবনের দরজা-জানালা সংস্কার ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা। নিয়মিত ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চালু করা। নিরাপত্তার জন্য গ্রাম পুলিশ বা আনসার নিয়োগ। রাতে মাদকাসক্তদের আড্ডা রোধে পুলিশি টহল জোরদার করা।
গলাচিপা সদর ইউনিয়ন পরিষদের ভবনটি জনগণের সেবার জন্য নির্মিত হলেও অবহেলায় এটি এখন একটি পরিত্যক্ত কাঠামো। এই অবস্থা শুধু অর্থের অপচয়ই নয়, স্থানীয়দের জন্য দুর্ভোগের কারণও। কর্তৃপক্ষের আশ্বাস সত্ত্বেও দ্রুত পদক্ষেপ ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। গলাচিপা উপজেলায় ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে এই ঘটনা একটি উদাহরণ হয়ে থাকতে পারে, যা স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। জনগণের প্রত্যাশা, এই ভবন শিগগিরই তাদের সেবায় ফিরে আসবে এবং দীর্ঘ ২০ বছরের অবহেলার অবসান হবে।