মো. রিয়াজুল ইসলাম, পটুয়াখালী: ওয়াজ মাহফিলের কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে পটুয়াখালীর দুমকীতে দু’পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের দুমকী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ঢাকায় ভর্তি করা হয়েছে। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) উপজেলার পূর্ব কার্তিকপাশা গ্রামে মুন্সি’র বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব কার্তিক পাশা গ্রামের মৃত আব্দুল গনি মাওলানার ছেলে মাওলানা মো: নেছার উদ্দিন নোমান প্রতিষ্ঠিত পূর্ব কার্তিকপাশা কারিমিয়া মাদ্রাসা মাঠে বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সেই মাহফিলের কমিটিতে এবং পোস্টারে সোবহান মুন্সি গংয়ের কারো নাম না রাখায় নেছার উদ্দিন মাওলানা ও সোবহান মুন্সি গংয়ের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। শনিবার বিকেলে মাহফিল ডেকোরেশনের মালামাল নিতে বাঁধা দেয় সোবহান মুন্সি’র লোকজন। এ সময় ক্ষিপ্ত হয়ে মাহফিল কমিটির লোকজন সোবহান মুন্সিকে অপমান করে। তখনই বিষয়টি সমঝোতা করে দেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। পরে সন্ধ্যায় মুন্সির বাজারে উভয় পক্ষের লোকজন লাঠিসোঁটা, রামদা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন।
মাহফিল কমিটির পক্ষে আহতরা হলেন- সবুজ খলিফা (৩৫), বশার হাওলাদার (২৫) জুয়েল খান (২৫), সালাউদ্দিন বাপ্পি (৩৫) ও বশির (২৪)। তাদেরকে দুমকী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার পর গুরুত্বর আহত বশার হাওলাদার, জুয়েল খান ও বশিরকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
অপরপক্ষের আহতরা হলেন- সোবাহান মুন্সী (৭০), সুলতান মুন্সি (৬০), ওয়াহিদ রহমান সহিদ মুন্সি (৫০), মোশারেফ মুন্সি (৫০) ও ইলিয়াস মুন্সী (৩০), জসিম মুন্সি (৪৮)। তাদের পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর আজ সকালে সোবাহান মুন্সি ও মোশারেফ মুন্সিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার করা হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে মাওলানা নেছার উদ্দিন নোমান বলেন, “মাদরাসা সভাপতিকে মাহফিল কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে। তবে পোস্টারে সোবাহান মুন্সি গংয়ের নাম না রাখায় তাদের বাড়ির সামনের রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে মাহফিল আয়োজকদের ওপর হামলা চালিয়েছে।” অপর দিকে মো. জাহাঙ্গীর মুন্সি বলেন, “প্রতিবছর মাহফিলে সোবহান মুন্সিকে সভাপতি করা হয়। কিন্তু এ বছর তাঁর নাম না রাখায় মুন্সি বাড়ির লোকেরা রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মাহফিল কমিটির সত্তার মহুরী, খলিল শরীফ, আকবর মৃধা ও সালাউদ্দিন বাপ্পি’র নেতৃত্বে মুন্সিবাড়ির লোকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে।” স্থানীয় ইউপি সদস্য খলিল শরীফ বলেন, “সোবহান মুন্সি’র শ্যালক উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রুবেলের মধ্যস্থতায় মাহফিল কমিটির দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য বলা হলেও পরবর্তীতে এ সংঘর্ষে জড়িয়ে ১৫ জনের মত আহত হয়।” এদিকে মাহফিলের কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়টিকে অস্বীকার করে ইলিয়াস মুন্সি বলেন, “মূলত পূর্ব শত্রুতার জেরে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। মুন্সী বাড়ির লোকজনকে হেনস্তা করতে স্থানীয় একটি কুচক্রী মহল কাজ করে চলছে।
ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে দুমকী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারেক মোহাম্মদ হান্নান বলেন, ‘‘ওয়াজ-মাহফিলে পোস্টারে নাম নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”