এম জাফরান হারুন, বাউফল, পটুয়াখালীঃ পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডভূ্ক্ত শৌলা গ্রামের নুর হোসেন খান বাড়ি নামক বাড়িতে গত শুক্রবার ১৪ই মার্চ-২০২৫ ইং তারিখ বিকালে ‘আমি আমার নিজের ইচ্ছায় কিছুই করিনি। আমাকে বাধ্য করা হয়েছে। ওই ছেলের জন্য আর ওর পরিবারের জন্য আমার জীবন থেকে মনে হয় সব সুখ শান্তি চলে।’ চিরকুট লিখে পূর্ব কালাইয়া হাসান সিদ্দিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী কুমকুম (১৫) নিজ ঘরের আঁড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে মেয়ের আত্মহত্যার ঘটনায় বাবা নজরুল ইসলাম খান বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে গত সোমবার ১৭ মার্চ-২০২৫ ইং তারিখ বাউফল থানায় মামলা দায়ের করেন।
আসামীরা হলেন, ১/ মোঃ রিয়াদুল ইসলাম তাওসিন (১৬), ২/ মোঃ রিয়াজ চৌকিদার (৪৫), ৩/ মোঃ মিলন চৌকিদার (৪২), ৪/ মোঃ নিরব চৌকিদার (৪০), ৫/ মোসাঃ তহমিনা বেগম (৩৫), ৬/ মোসাঃ হাওয়া বিবি (৬২), ৭/ মোঃ কায়দে আজম (৪৭), ৮/ মোঃ রিয়ান (২৩), ৯/ মোঃ আরিয়ান (১৮)।
তবে মামলা রুজুর পরপরই ৭নং আসামী মোঃ কায়দে আজমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদিকে অন্যান্য আসামীরা ওই সময় পলাতক থাকায় তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি থানা পুলিশ। কায়দে আজমকে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হলেও আসামি কায়দে আজম জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পান এবং অন্যান্য আসামীরা জামিনে মুক্তিতে রয়েছেন।
মামলার এজাহার ও কুমকুমের স্বজন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্কুলে যাওয়া ও আসার পথে বিভিন্ন সময় তাকে উত্ত্যক্ত করতো তাওসিন নামের এক তরুণ। তাওসিন একই স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন। তবে বিষয়টি তাওসিনের পরিবার ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জানায় কুমকুমের পরিবার। এতে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে তাওসিন। বৃহস্পতিবার কুমকুমের সঙ্গে আরেক সহপাঠীর তোলা ছবির সঙ্গে আজেবাজে ক্যাপশন লিখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে তাওসিন। তা জানার পর চিরকুট লিখে নিজ কক্ষের আঁড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে কুমকুম।
ওই সময় কুমকুমের মা অভিযোগ করেন, তার মেয়েকে বিভিন্ন সময় তাওসিন কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। বিষয়টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও তাওসিনের পরিবারকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ কারণে ওই বখাটের সাহস আরও বেড়ে যায়। মেয়ের সঙ্গে তার এক সহপাঠীর তোলা স্বাভাবিক ছবিতে বাজে মন্তব্য লিখে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয় তাওসিন। এতে লোকলজ্জার ভয়ে তার মেয়ে আত্মহত্যা করেন বলে এমনটি জানান।
মামলায় ৯ জনের নাম দেওয়া প্রসঙ্গে মামলার বাদী ও নিহত ছাত্রীর বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘উত্ত্যক্তকারী বখাটের বিষয়ে তার অভিভাবক ও স্বজনদের কাছে বিচার দেওয়া হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যদি তাওসিনের পরিবার থেকে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হতো তাহলে আমার মেয়ে আত্মহত্যা করতো না। বখাটেপনাকে প্রশ্রয় দেওয়ার অপরাধে তাওসিন ছাড়া আরও ৮জনকে আসামি করা হয়েছে। এখন থানা পুলিশ চার্জশিট দিবে, তাই আমার ও আমার পরিবারের দাবি হলো পুলিশ যেন সত্যটাই চার্জশিট দেয়। আর এ চার্জশিটের অপেক্ষায় আমি ও আমার পরিবার সহ এলাকার জনগণ।
এ প্রসঙ্গে প্রধান আসামী মোঃ রিয়াদুল ইসলাম তাওসিন বলেন, কুমকুম আমার জুনিয়র ছিল। এবং সে আমার সম্পর্কে ফুফু হতো। তবে আমরা একসাথে প্রায়ই স্কুলে আসা-যাওয়া করতাম। আমি তাকে কখনও উত্ত্যক্ত বা কোনো প্রকার কুপ্রস্তাব দেইনি। এবং আমি আমার ফেসবুক আইডি দিয়ে তার কোনো ছবিও পোস্ট করিনি। আমাকে এবং আমার পরিবারকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলা দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে তাওসিনের বাবা-মা বলেন, পূর্ব বিরোধের জের ধরে আমাদের নামে মামলা করা হয়েছে। এমন ঘটনার সাথে আমার ছেলে কিংবা আমার পরিবারের কেউ জরিত নয় বা কেনো প্রকার অভিযোগও মেয়ের পক্ষ থেকে কেউ আমাদের কাছে দেয়নি। এসব ঘটনার জের ধরে আমাদের তরমুজ ক্ষেত নিয়েও সমস্যা করেছে তারা। তবে আমাদেরও দাবি যাতে থানা পুলিশ সত্য ঘটনার আলোকে চার্জশিট দিবেন।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাউফল থানার এসআই মোঃ আল-আমিন খালাসী বলেন, মামলা দায়েরের পরপরই একজন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আর অন্যান্য আসামীরা পলাতক থাকায় গ্রেফতার করা যায়নি। পরে আসামীরা সবাই আদালত থেকে জামিনে রয়েছে। আর এ মামলার তদন্ত চলছে, তাই তদন্ত শেষ হলেই দ্রুত চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হবে।