জালাল আহমেদ, পটুয়াখালীঃ বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা না থাকায় পাঠ গ্রহনে চরম ঝুঁকিতে পড়েছে পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলার পাংগাশিয়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
দীর্ঘ বন্ধের পর চলমান হিট এল্যার্ট জারির মধ্যে রবিবার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ গ্রহন ও পাঠদান শুরু হয়েছে। পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলার পাংগাশিয়া ইউনিয়নের পাংগাশিয়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ন ভবনেও পাঠদান চালু হয়েছে। বিদ্যুত লাইন থাকলেও জরাজীর্ন ভবনের শ্রেনী কক্ষসমূহে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার উপযোগী না থাকায় বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা নাই। এ অবস্থায় তীব্র তাপদাহ বিশেষ করে পটুয়াখালীতে ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা চলমানের পাশাপাশি ক্লাসে বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা না থাকায় পাঠগ্রহনে আসা শিক্ষার্থীরা চরম ঝুঁকিতে পরেছে। এ বিদ্যালয়ে আসা নবম শ্রেনীর ছাত্রী বোরকা পরিহিত মার্জিয়া আক্তার জানান, “ক্লাসে ফ্যানের ব্যবস্থা নাই, সামান্য সময়ে প্রচন্ড গরমের ঘামে জামা কাপড় সব ভিজে গেছে, চরম অস্বস্তি লাগছে।”
রোজা ও ঈদের বন্ধের পরে স্কুল খোলার আজ রবিবার প্রথম দিনে স্কুলে গিয়ে দেখা যায় ঐ স্কুলের সকল ছাত্রীই গরমের মধ্যে প্রচন্ড তাপের কারনে শ্রেনীকক্ষে কোন বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা না থাকায় ঘর্মাক্ত ও ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। স্কুলের ভবনের ছাদের পলেস্তার একদিকে যেমন খসে পড়েছে তেমনি অন্যদিকে ভীমের রড বের হয়ে আছে। এ ছাড়াও ভবনের রুমগুলির দীর্ঘ দিনের মেরামতের অভাবে কোন জানালার গ্রীল না থাকায় নিরাপত্তা জনিত কারনেও বৈদ্যুতিক পাখাও লাগানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
১৯৯৬ সালের আগ পর্যন্ত ঐ পাংগাশিয়া গ্রামের মহিলারা যেখানে স্থানীয় সরকারসহ জাতীয় নির্বাচনে কোন ভোটাধিকার প্রদান করতো না ,সেখানে নারী শিক্ষার প্রসার ও উন্নয়নে ১৯৮৫ সালে এলাকার কয়েকজন দানশীল ব্যাক্তির সহায়তায় এক একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় পাংগাশিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়টি। শুরুতে ৭৫ ফুটের একটি টিনের ঘরে এলাকার মেয়েদের নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৯৫ সালে সরকারী সহায়তায় শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে একটি একতলা ভবন নির্মান করা হলেও দীর্ঘদিনের সংস্কারের অভাবে ভবনটি সম্পূর্ন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এমনকি ভবনের তিনটি রুমের দুইটিতে কোন জানালা নেই ,দরজা গুলিও জরাজীর্ন, আরেকটি রুমের জানালা টিন দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে আটকিয়ে রাখা হয়েছে বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানাগারের মালামাল, বঙ্গবন্ধু কর্ণারের বইগুলিসহ বিদ্যালয়ের পাঠাগারের বই গুলিকে চুরির হাত থেকে রক্ষার জন্য। যার ফলে ঐ রুম গুলিতে গরমের দিনে শ্রেনী কার্যক্রমও চালানো যাচ্ছে না। প্রচন্ড গরমের মধ্যে জানালা না খুলতে পারাসহ ছাদের ভীমের রড বের হয়ে যাওয়ার কারনে বৈদ্যুতিক পাখা লাগাতে পারছে না স্কুল কর্তৃপক্ষ।
বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা আবু ইউসুফ বলেন, “ভবনটি জরাজীর্ন, সংস্কার না করার কারনে কক্ষসমূহের পলেস্তার খসে পড়ে লোহার রডগুলো বের হয়ে যাওয়ার কারনে বৈদুতিক ফ্যান লাগানো যাচ্ছে না। প্রচন্ড গরমে মেয়েরা ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে। যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কা রয়েছে।”
দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থী আমেনা বলেন, “অসহ্য গরম, খুব কষ্ট হচ্ছে। তার উপর আমরা সবসময়য় আতংকে থাকি কখন ছাদ থেকে পলেস্তার খসে মাথার উপরে পড়ে। যার কারনে স্যারদের পাঠদানেও আমরা মনোযোগী হতে পারি না।”
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, “ভবনটির নির্মানের পর থেকে কোন মেরামত না হওয়ায় এটি এখন একটি ঝুকিপূর্ণ ভবনে রুপ নিয়েছে। ছাদের ভীমের পলেস্তার খসে পড়ে রডগুলো বের হয়ে গেছে ফলে বৈদ্যুতিক ফ্যান ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এ ব্যপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে একাধিক বার লিখেছি কিন্তু কোন প্রতিকার হয়নি।”
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, “আমাদের কাছে যে বরাদ্দ আসে তা এমপি মহোদয়দের ডিও লেটারের মাধ্যমে দেয়া হয়। ভবনের সংস্কার কিংবা নতুন ভবন করতে হলে সে পক্রিয়ায় আগাতে হবে। আমি ঐ স্কুল ভবনটির কথা শুনেছি,শীঘ্রই বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে যাবো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।”