জালাল আহমেদ, প্রধান প্রতিবেদক: জাল জ্বালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত, একাধিক নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত ও বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত পটুয়াখালীর আজিজ আহমেদ কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আহসানুল হক ইনডেক্স নং (৩০৭৯৭০৮)ও ব্যবসায় সংগঠন বিষয়ের প্রভাষক মো: এবাদুল হক ইনডেক্স নং (৩০৭৯ ৭১৫) এর এমপিও শিট হতে মাউশি'র ডিজি কর্তৃক ইনডেক্সসহ এমপিও শিট থেকে নাম কর্তন হওয়ার পরেও গভর্নিং বডি'র সভাপতির প্রশ্রয়ে অবৈধ অধ্যক্ষসহ দুই শিক্ষক অবৈধভাবে বহাল রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মাউশি অধিদপ্তরের স্মারক নং ৭জি/১৫৪(ক-৩)/২০১০পত্র ও বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয় মাউশির স্মারক মাউশি /ববি/২০২২/২০১০ পত্রসহ স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের অন্যতম সদস্য মোঃ জসিম উদ্দিন হাওলাদার, মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন ও ভুক্তভোগী নারী নুরুন্নাহারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও মাউশি একাধিকবার তদন্ত টিম গঠন করে তদন্ত সম্পন্ন করেন।
মাউশি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয় ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্তৃপক্ষগণের পৃথক তদন্তে জাল জ্বালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত, একাধিক নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত ও বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি প্রমানিত হওয়ায় মাউশি নৈতিক স্খলনে দায়ী অভিযুক্ত অধ্যক্ষ আহসানুল হক ও তার সাথে অনৈতিক সম্পর্কের সহকর্মী শিলা হালদার ও ব্যবসায় সংগঠন বিষয়ের প্রভাষক মোঃ এবাদুল হকের ইনডেক্স সহ এমপিও শিট থেকে কর্তন করে দেন।
ফলশ্রুতিতে ২০২৪ সালে এমপিও শিটে সকল শিক্ষক কর্মচারীর বেতন ভাতা হলেও মাউশি অবৈধ অধ্যক্ষ ও ব্যবসায় সংগঠন বিষয়ের প্রভাষক এবাদুল হক ও শিলা হাওলাদারের ইনডেক্সসহ এমপিও স্থগিত করে ২০২৫ সালের জানুয়ারী মাসে তাদের বেতন ভাতা সম্পূর্নভাবে বন্ধ করে দেয়।
অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সহ প্রভাষক মোঃ এবাদুল হক এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য মাউশি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয় কর্তৃপক্ষগণ কর্তৃক একাধিকবার গভর্নিং বডির সভাপতির কাছে চিঠি প্রেরণ করেন। কিন্তু গর্ভনিং বডির সভাপতি নাসরীন জাহান অজ্ঞাত কারনে অধ্যক্ষ ও প্রভাষক এবাদুল হকের বিরুদ্ধে কোনরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।
উক্ত পত্র সূত্রে আরও জানাগেছে, আজিজ আহমেদ কলেজের অর্থনীতি বিষয়ের প্রভাষক মোঃ আল আমিনের বিরুদ্ধে তার প্রথম স্ত্রী মোসাঃ নুরুন্নাহার বেগম কর্তৃক পারিবারিক আদালতে মামলা করায় একাধিকবার সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারা ভোগ করার কারনে মাউশি ও বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ে দায়ের করা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মাউশি প্রভাষক আল আমিনকে সাময়িক বরখাস্ত করার আদেশ প্রদান করেন। মাউশির আদেশ মতে প্রভাষক আল আমিনকে সাবেক গভর্নিং বডির সভাপতি সাময়িক বরখাস্ত করেন। কিন্তু পরবর্তীতে এই অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আহসানুল হক অত্র কলেজের প্রভাষক আল আমিনকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশে যেখানে অর্ধেক বেতন দেয়ার কথা সেখানে অধ্যক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রভাষক আল আমিনকে পূর্ণাঙ্গ বেতন প্রদান করছেন বলে ভুক্তভোগী মোসাঃ নুরুন্নাহার অভিযোগ করেন।
উল্লেখ্য, নৈতিক স্খলনের দায়ে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ আহসানুল হকের সাথে ইতিহাস বিষয়ের প্রভাষক শিলা হালদারের ৯ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের একটি কল রেকর্ড ভাইরাল হয়েছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে কলেজের শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছিল। যেখানে মাউশির শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক তপন কুমার মহোদয় এর স্বাক্ষরিত চিঠি অনুযায়ী অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও ব্যবসায় সংগঠন বিষয়ের প্রভাষকের এমপিও স্থগিত করেন।
এমপিও শিট থেকে অভিযুক্ত অধ্যক্ষসহ শিলা হালদার ও প্রভাষক মোঃ এবাদুল হকের ইনডেক্স সহ নাম কর্তন করেছেন মাউশি কর্তৃপক্ষ সেখানে সেই এমপিও শীটে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ আহসানুল হক অবৈধভাবে স্বাক্ষর করেন। এই নিয়ে কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ স্থানীয় জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় কলেজটিতে শিক্ষাদানসহ প্রশাসনিক কার্যক্রম দিন দিন মুখ থুবরে পড়ছে। প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক কল্যান বিবেচনায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা একান্ত জরুরী বলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মত প্রকাশ করছেন।
এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডিডি ওমর ফারুক বলেন, আজিজ আহমেদ কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে প্রমানিত হওয়ায় তার ইনডেক্স স্থগিত করা হয়েছে মর্মে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কলেজ গর্ভনিং বডির সভাপতিকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
কলেজ গর্ভনিং বডির সভাপতি নাসরীন জাহান জানান, আমি চিঠি পাইনি। চিঠি পেলে কমিটির মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রভাষক আল আমিন সম্পূর্ন বেতন উত্তোলন করেন কি-না জানতে চাইলে সভাপতি বলেন, আমি জেনে আপনাকে বলব। আল আমিন তার প্রথম স্ত্রী কর্তৃক পারিবারিক মামলায় একাধিকবার জেল খেটেছে জানি। আল আমিন তার দুই শিশু সন্তানের ভরন পোষন দিচ্ছে তাও জানি। এদিকে অভিযোগকারী আল আমিনের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম জানান মাউশি'র নির্দেশ মতে দুই শিশু ছেলের ভরন পোষন দেয়ার টাকা দিচ্ছে না বলেও নুরুন্নাহার অভিযোগ করেছেন।