জালাল আহমেদ, প্রধান প্রতিবেদকঃ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর হতে মহাপরিচালকসহ পরিচালক এবং বাংলাদেশ নার্সিং মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ও রেজিষ্ট্রার পদ থেকে নন নার্সিং প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের অবিলম্বে প্রত্যাহারসহ উচ্চ শিক্ষিত, দক্ষ, যোগ্য ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নার্স ও মিডওয়াইফদের পদায়ন করে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি পেশায় বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরন, নার্সিং প্রশাসনিক গতিশীলতা আনয়ন ও সেবার মানোন্নয়নের দাবীতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান এর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সংস্কার পরিষদ নেতৃবৃন্দ।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১ টায় জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন নার্সিং সংস্কার পরিষদ পটুয়াখালী জেলা কমিটির আহবায়ক মোসাঃ আয়শা বেগম ও সদস্য সচিব মাহমুদা সুলতানা শিউলী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সদস্য মমতাজ খানম, নাজমুন নাহার, কাওসার মাহমুদ, নাসিমা বেগম, ফাতিমা শরীফ, স্টুডেন্ট নার্স রিয়াজ হাওলাদার প্রমুখ।
তারা স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেন, ২০১১ সালে নার্সদের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে পরিদপ্তরকে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরে উন্নীত করা হয়। পরিদপ্তর প্রতিষ্ঠার পর থেকে তৎপরবর্তী অধিদপ্তরের পরিচালক পদে ২০১৬ সাল পর্যন্ত নার্স কর্মকর্তারাই অধিষ্ঠিত ছিলেন। অনুরূপভাবে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের রেজিষ্ট্রার পদে নার্সরাই দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, বিগত সরকারের সময় দক্ষ ও অভিজ্ঞ নার্স এবং মিডওয়াইফ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি না দিয়ে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাগন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পরিচালকসহ কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার পদগুলে দখল করে আছেন। নার্সিং প্রশাসন ও শিক্ষাক্ষেত্রে অনভিজ্ঞ নন-নার্স কর্মকর্তা পদায়নের ফলে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সেবা ও শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, যা পেশার মানোন্নয়নে বড় অন্তরায়। এ ছাড়াও এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, ঘুষ-দুর্নীতি, বদলি ও নিয়োগ বানিজ্য, টেন্ডারবাজি, হজ্জ মিশনে নাম নির্বাচন, বিদেশ গমন ও প্রশিক্ষনে অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
এমতাবস্থায় নার্সিং ও মিডওয়াইফারি পেশার উন্নয়নে নার্সদের গতিশীল নেতৃত্ব আবশ্যক। বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত নার্স ও মিডওয়াইফের সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ। তন্মধ্যে সরকারি খাতে কর্মরত নার্স ও মিডওয়াইফের সংখ্যা মাত্র ৪৭,০০০ যা দেশের জনসংখ্যার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের আওতায় প্রথম শ্রেনীর (৯ম থেকে ৪র্থ-গ্রেডে) ৮৫৯টি পদের মধ্যে ৬০০টি পদ নিয়মিত পদোন্নতি না দেওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। বিদ্যমান নিয়োগ বিধিমালা (২০১৬) অনুসারে নিয়মিত পদোন্নতি পেলে নার্স ও মিডওয়াইফগণ মহাপরিচালক পদে অধিষ্ঠিত হতো। উল্লেখ্য যে, বর্তমানে সরকারি পর্যায়ে ৫৪ জন নার্স দেশ-বিদেশ থেকে পিএইচডি এবং প্রায় ৪৪৪০ জন মাস্টার্স এবং ৭২৯৫ জন বিএসসি ইন নার্সিং ডিগ্রী সম্পন্ন করেছেন। তাদের অনেকের চাকুরির সময়কাল ২০-৩৫ বৎসরের অধিক হলেও নিয়মিত পদোন্নতি না পাওয়ায় তারা এখনো এন্ট্রি পোস্টে (১০ গ্রেডে) কর্মরত আছেন।
অতি সম্ভাবনাময় এই পেশার এহেন প্রতিকূল পরিবেশে আপনার সরকারের উন্নয়ন ও সংস্কারের অংশ হিসেবে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সেবা ও শিক্ষার আধুনিকায়নে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ নার্সিং এন্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিল থেকে সকল প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের অবিলম্বে প্রত্যাহারসহ উপযুক্ত নার্স ও মিডওয়াইফ কর্মকর্তাদের পদায়ন করে অধিদপ্তর এবং কাউন্সিলের কার্যক্রম গতিশীল ও মানোন্নয়ন অপরিহার্য।
এ অবস্থায় নার্সিং ও মিডওয়াইফারি পেশায় বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণ, নার্সিং প্রশাসনিক গতিশীলতা আনয়ন ও সেবার মানোন্নয়নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস এঁর সদয় হস্তক্ষেপ ও সমস্যাগুলোর আশু সমাধানের দাবী করেন জেলা নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সংস্কার পরিষদ নেতৃবৃন্দ।